বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল ঢাকায় এসেছেন। বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান, যেখানে বর্তমানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবীর খান।
বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটামুক্ত না হলেও তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সূচক আগের তুলনায় উন্নতি হলেও এখনো বিদেশে নেওয়ার মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে মেডিকেল বোর্ডের চূড়ান্ত মতামত ও শারীরিক অবস্থার ওপর।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে হাসপাতাল এবং তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসা নিয়ে প্রায় চার মাস অবস্থান করার পর তিনি গত ৬ মে দেশে ফেরেন।
বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের সামনে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বিদেশে নেওয়ার সব প্রস্তুতি বিএনপির রয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসে তাঁর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পর এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চিকিৎসা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞও অনলাইনে ও সরাসরি সংযুক্ত আছেন। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসে চিকিৎসা পরামর্শে যুক্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া করা হয়।
এদিন রাতেই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এভারকেয়ার হাসপাতাল গিয়ে খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নেন এবং তাঁর পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারাও খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও মাঝে মাঝে কিছু জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ কারণে নতুন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকের বিখ্যাত চিকিৎসক প্যাট্রিকও তাঁদের আলোচনায় যুক্ত ছিলেন।
বিশেষ নিরাপত্তায় এসএসএফ দায়িত্ব গ্রহণ
সরকার খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি)’ ঘোষণা করায় বুধবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতালের অভ্যন্তরে দায়িত্ব গ্রহণ করে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। এসএসএফ আইন–২০২১ অনুযায়ী তাঁকে এই বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এসময় হাসপাতালের লবি, কেবিন এলাকা ও চত্বরজুড়ে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়।