গত বছরের ঠিক এ সময়েই ডিমের ডজন প্রথমবারের মতো ১৫০ টাকা উঠেছিল। এবারও বছরের সেই সময়ে এসে ডিমের দামে নতুন রেকর্ড হলো। বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছুঁয়েছে ১৬০ টাকায়। ডিমের সরবরাহে একটু টান রয়েছে। এর মধ্যে পুরোনো চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠায় এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগ ও মগবাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। বাজারে এখন প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। ১৫৫ টাকা ডজনের ডিম আকারে ছোট। একটু বড় আকারের ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁস ও দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকার মধ্যে। এই দুই ধরনের ডিমের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা তানভীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ফার্মের মুরগির একটি ডিম পাইকারিতে কিনতে হচ্ছে ১২ টাকার বেশি। সামান্য লাভ করে বিক্রি করলেও প্রতি ডজনের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে অনেক ডিম ভেঙে যায়। তাতে খুচরায় প্রতি ডজনের দাম ১৬০ টাকার নিচে বিক্রি করলে লোকসান হয়।
বাজারে এখন প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। ১৫৫ টাকা ডজনের ডিম আকারে ছোট। একটু বড় আকারের ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁস ও দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকার মধ্যে। এই দুই ধরনের ডিমের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
সাদা রঙের ডিমের দাম বাদামি ডিমের থেকে একটু কম থাকে। এখন দুই পদের ডিমের দাম সমান হয়ে গেছে। বাদামি ডিমের প্রতিটির দাম পড়ছে ১৩ টাকার আশপাশে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক সপ্তাহে ঢাকার বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগে যে ডিম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা হালি ছিল, এখন তা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হালি।
পাইকারি ও খুচরা ডিম বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে ডিমের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর এমন সময়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজার অস্থির করছেন। সংকটে সুযোগ নিতে পাইকারেরা কমিশন বাড়িয়ে নিচ্ছেন, এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে।
বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে ডিমের বড় কোন সংকট হয়েছে তা বলা যাবে না। চাহিদা একটু বেড়েছে। আর পাইকারেরা কমিশন বাড়িয়ে রাখায় ডিমের দাম বেশি পড়ছে।
দেশে এর আগে কখনো এত দামে মানুষকে ডিম কিনতে হয়নি বলে জানিয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। কারণ ছিল বার্ড ফ্লু। তখন এ রোগের কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে সরবরাহে সংকট তৈরি হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার আশপাশে। সর্বশেষ গত আগস্টে দামের নতুন রেকর্ড হয় প্রতি হালি ৫০ টাকা। এতে একটি ডিমের দাম পড়ে সাড়ে ১২ টাকার ওপরে। পরে কোথাও কোথাও দাম আরও একটু বেড়েছিল।
গত বছর যখন ডিমের দামে রেকর্ড গড়ে, তখন বাজারে পোলট্রি খাদ্যের দাম বেশি ছিল। এখন খাদ্যের দাম অবশ্য কিছুটা কমেছে। এরপরও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বাজারে ডিমের দাম বাড়তি হওয়ার পেছনে খাবারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডিম-মুরগির দাম বারবার ওঠানামার কারণ হিসেবে অনেকে চক্র ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের দায়ী করে থাকেন।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষুদ্র খামারিরা যখন উৎপাদন করেন, তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চক্র দাম কমিয়ে রাখে। এমন অবস্থায় প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদনে টিকে থাকতে পারেন না। ক্ষুদ্র খামারিরা উৎপাদন কমিয়ে দিলে এই চক্র ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। দেশে উৎপাদিত এই ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। এই ডিম খাওয়ার পাশাপাশি একটি বড় অংশ দিয়ে আবার বাচ্চাও ফোটানো হয়। বাজারে সাধারণ ডিমের পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ নানা ডিমও আছে। এসব ডিমের দাম আরেকটু বেশি।