আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বারোমাসিয়া নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের আট গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষের কাছে।
গ্রামবাসীরা বলছেন, বছরের পর বছর তারা প্রতিশ্রুতি পেলেও নদীর ওপর সেতু তৈরি হয়নি। গ্রামবাসীর চাঁদায় নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেই চলাচল চলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনো ভাঙা বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বা কখনো গলা পানি সাঁতরিয়ে নদী পার হয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন তারা।
সরজমিনে দেখা যায়, নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ি, চর গোড়ক মণ্ডল, ঝাউকুটি, পশ্চিম ফুলমতি, হক বাজার, খারুয়া ও চর খারুয়া গ্রামের বসবাসরত অন্তত ১০ হাজার মানুষ একটি সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বারোমাসিয়া নদী পারাপার করে।
এসব গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর ওপর সেতু নেই তাই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলতে হয়। নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর কেউ খোঁজ রাখেন না। প্রতিবছর স্থানীয়রা চাঁদা তুলে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যর নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার করেন। এতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয়। প্রতিবছর এই ব্যয় বাড়লেও প্রশাসন থেকে কোন আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয় না। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর কারণে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের।
ঝাউকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল হক বলছিলেন, “নদীর অপর পাড়ে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাইস্কুল এবং তিনটি বাজার রয়েছে। প্রতিদিন এই নদীর ওপর দিয়ে শত শত মানুষ পারাপার করে। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থী ও হাট-বাজার করতে আসা ব্যবসায়ীরা ভীষণ ভোগান্তির মধ্যে পড়ে যান।”
কাঁধে সাইকেল নিয়ে সাঁকো পার হচ্ছিলেন ঝাউকুটি গ্রামের হবিবর রহমান। তিনি বলেন, “সাঁকো মেরামত না করায় ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছি। কারণ নদীতে এক গলা পানি। যাচ্ছি শশুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে। কাপড় ভিজে গেলে কেমন হবে তাই ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছি।”
চর গোড়ক মণ্ডলের কদভানু বলছিলেন, “খুব ভয়ে ভয়ে সন্তানকে কোলে নিয়ে সাঁকো পার হবার নাগছি। ছওয়াটাও খুব ভয় পাইছে। চেয়ারম্যান মেম্বাররা তো পালাইছে। ব্রিজ আর কি করবে!”
স্থানীয় বাসিন্দা জমসেদ আলী বলেন, “এই সাঁকো পার হতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী সাইকেলসহ নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন গর্ভবতী ও অসুস্থ রোগীরা। সাঁকো নষ্ট হওয়ায় এবং নদীতে পানি থাকায় তাদেরকে আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্ব পথ ঘুরে ফুলবাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। যা সময় সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
একই এলাকার ওবায়দুল ও মাঈদুল বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বরাদ্দ না থাকায় নদীর দুই পাড়ের মানুষের কাছে বাঁশ সংগ্রহ করে সাঁকোর পুনঃমেরামত কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রায় ছয় শতাধিক বাঁশ সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু বিনাশ্রমে মানুষ কতদিন কাজ করবে। এ কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন আবারও চাঁদা তুলে শ্রমিক দিয়ে সাঁকো নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য দরকার প্রায় লক্ষাধিক টাকা।
এ ব্যপারে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হাছেন আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে কোন বরাদ্দ নেই। এখন স্থানীয়দের মাধ্যমে কাজটি শেষ করতে হবে। আর স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সিরাজউদ্দৌলা বলেন, বাঁশের সাঁকো পুনঃমেরামতের জন্য বর্তমানে কোন বরাদ্দ নেই।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মোছাঃ রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে জানলাম। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।