প্রকাশকালঃ
১০ জুলাই ২০২৪ ০৬:১৬ অপরাহ্ণ ৬৬৩ বার পঠিত
বাইরে গেলে চা, কফি খায় না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চা-কফি ওয়ান টাইম কাপে দেয়া হয়। এমনকি বিভিন্ন ফলের জুস দিতেও ব্যবহার করা হয় ওয়ান টাইম কাপ। আপনি যদি নিয়মিত ওয়ান টাইম কাপে এসব পানীয় খান তাহলে ভাববার বিষয়। কারণ বেশির ভাগ ওয়ান টাইম কাপ প্লাস্টিকের হয়ে থাকে। আর এই প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়েছে সব জায়গায়। এমনকি খাবারের মাধ্যমেও প্লাস্টিক কণা ঢুকে পড়তে পারে আমাদের শরীরে। প্লাস্টিকজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। রোজকার জীবনে ছোটখাটো কিছু বিষয় মেনে চলার মাধ্যমে এ ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়।
প্লাস্টিকের কণার প্রভাব
প্লাস্টিক কণার প্রভাবে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মানবদেহ। হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হরমোনের সমস্যা হতে পারে এ থেকে। শিশুদের বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি গর্ভের শিশুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সন্তান ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণও হতে পারে প্লাস্টিক কণা। তবে রোজকার জীবনে টেকসই, পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করলে এবং প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার সীমিত করে ফেলতে পারলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা সম্ভব। ওয়ান টাইম কাপ কি
স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ
প্লাস্টিকের কাপ আমাদের শরীরের ক্ষতি ডেকে আনে। এই কাপ তৈরি করতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। আবার কাগজের তৈরি কাপেও মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। কাপে যখন গরম চা ঢালা হয়, তখন সেই তাপে প্লাস্টিক গলে চায়ে মিশে যায়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এক একটি কাপে প্রায় ২৫ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে। কাপে গরম চা ঢাললে খুব অল্প সময়ে এই প্লাস্টিক গলে চায়ে মিশে যায়। দিনে যারা অন্তত চার-পাঁচবার এই কাপে চা খান, তাদের শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই বেশি।
প্লাস্টিকের কণার প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে
প্লাস্টিক কণার প্রভাব ও ক্ষতি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনূর শারমিন। তিনি বলেন, পরিবেশে প্লাস্টিক বহু বছর ধরে রয়ে যায়। ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। মাটি বা পানিতে রয়ে যাওয়া প্লাস্টিকের প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর। বাস্তুতন্ত্রের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব না হলেও অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। যতটুকু ব্যবহার না করলেই নয়, প্লাস্টিকের ব্যবহার ততটুকুতেই সীমিত রাখতে চেষ্টা করুন। ব্যবহার করতে হলেও ভালো মানের প্লাস্টিক বেছে নিন। মেনে চলুন এর ব্যবহারবিধি। আর খুঁজে নিন পরিবেশবান্ধব বিকল্প। তা ছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেল করার প্রতিও গুরুত্ব দিলেন এই চিকিৎসক। রোজকার জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক।
শিশুদের ক্ষেত্রে
শিশুর জন্য প্লাস্টিকের বোতল বেছে নেবেন না। নিতান্তই প্লাস্টিক ব্যবহার করতে হলেও তাতে গরম দুধ ঢালবেন না। গরম পানিতে প্লাস্টিকের বোতল পরিষ্কার করা হলে এরপর আবার স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে তা ধুয়ে নিন।
ডায়াপারের ব্যবহার সীমিত রাখুন। প্রয়োজনে কাপড়ের ডায়াপার বেছে নিন।
ওয়াইপের বদলে সুতি, নরম কাপড় বেছে নিন।
প্লাস্টিকের খেলনা এড়িয়ে চলা ভালো। বিশেষ করে শিশু যেসব খেলনা মুখে দিতে পারে, সেগুলো যাতে প্লাস্টিকের না হয়।
খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্লাস্টিক কণার প্রবেশ কীভাবে রোধ করবেন?
১. প্লাস্টিকের পাত্রে বা প্যাকেটে খাবার না রাখাই ভালো। নিতান্তই রাখতে হলে ‘ফুড গ্রেড’ প্লাস্টিকের বাটি বেছে নিন।
২. প্লাস্টিকের পাত্রে পানি রাখবেন না। কাচের বোতল ব্যবহার করুন। কিংবা এমন বোতল ব্যবহার করুন, যার ভেতরটা ধাতব উপকরণে তৈরি। বিশেষ করে যখন আপনি রোদে যাচ্ছেন, তখন এ বিষয়টি খেয়াল রাখুন।
৩. নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া প্লাস্টিকের গ্লাস ব্যবহার করবেন না। তরল গ্রহণের জন্য প্রচলিত ‘স্ট্র’ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। বাঁশের তৈরি ‘ওয়ান টাইম’ চামচ, কাঁটাচামচ, প্লেট, গ্লাস প্রভৃতি ব্যবহার করতে পারেন।
৪. রেস্তোরাঁয় গিয়েও আগেই বলে দিন, প্লাস্টিকের কোনো পণ্য যাতে আপনাকে না দেওয়া হয়।
৫. প্লাস্টিকের পাত্রে কখনোই গরম খাবার বা গরম পানি রাখবেন না। এসব পাত্র ওভেনে দেবেন না। ‘ওয়ান টাইম কাপ বা গ্লাসে’ চা-কফি খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। গরম তরল নাড়াচাড়া করতে প্লাস্টিকের চামচ ব্যবহার করবেন না। বাইরে গেলেও প্রয়োজনে এগুলোর বিকল্প নিজের কাছে রাখতে পারেন।
৬. রান্নাঘরে প্লাস্টিকের কৌটা ও চামচ না রাখাই ভালো। চপিং বোর্ড, বেকিং ট্রে এবং বেকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত ছাঁচ যাতে প্লাস্টিকজাতীয় পণ্যের না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৭. বাজারে যাওয়ার সময় নিজেই একাধিক টেকসই ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। বিক্রেতাকে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ দিতে নিষেধ করে দিন।
৯. স্যান্ডউইচের মতো কোনো খাবার মুড়িয়ে নিতে মোমের পরত (বিস ওয়াক্স র্যাপ) কাজে লাগান।