ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে রৌমারী-চিলমারী নৌপথে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দুইশ’ বিঘার চরের কাছে ইজতেমার উদ্দেশে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী নৌকায় এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দুটি ডিঙি নৌকায় করে ১৬-১৭ জনের ডাকাত দল যাত্রীবাহী নৌকার গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাপয়সা কেড়ে নেয়।
নৌকার মাঝি ও ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রৌমারীর ফুলুয়ার চর নৌ-ঘাট থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে কুড়িগ্রামের ধরলা তীরের ইজতেমার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি রিজার্ভ নৌকা ঢুষমারা থানাধীন অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দুইশ’ বিঘার চরের কাছে পৌঁছালে দুটি ডিঙি নৌকায় করে ১৬-১৭ জনের ডাকাত দল নৌকাটি ঘিরে ফেলে। এরপর ‘পিস্তল’ ও দেশি অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে প্রত্যেকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। নৌকার একটি শ্যালো ইঞ্জিন ভাঙচুর করে হ্যান্ডেল নদীতে ফেলে দেয়। এরপর কয়েকজন যাত্রীকে মারপিট করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা কেড়ে নিয়ে চলে যায় ডাকাত দল।
নৌকায় থাকা যাত্রী ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মইজুদ্দি জানান, তারা কয়েকজন মুসল্লি কুড়িগ্রামে ইজতেমায় অংশ নেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। রৌমারীর ফলুয়ার চর থেকে ৮টা ৪০ মিনিটে নৌকা ছাড়ে। দুইশ’ বিঘার চরের মাথার কাছে দুটি নৌকায় করে ১৬-১৭ জন ডাকাত তাদের নৌকায় আক্রমণ করে। তাদের মধ্যে ৬-৭ জনের হাতে পিস্তল ছিল। বাকিদের হাতে রামদা ও দেশি অস্ত্র ছিল। তারা কয়েকজন যাত্রীকে মারধর করে। যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করে টাকাপয়সা সব নিয়ে নেয়।
ময়জুদ্দি বলেন, ‘আমি পেঁয়াজের ব্যবসা করি। ইজতেমায় অংশ নেওয়ার পর পেঁয়াজ কিইনা ফিইরা আসতাম। আমার কাছে থাকা পেঁয়াজ কেনার এক লাখ ৮০ হাজার ৭০০ টাকা ডাকাতরা কাইড়া নিছে। আমারে মারধর করছে। সব যাত্রীর টাকা ছিনিয়া নিয়া গেছে।’
‘একজনের মুখ ঢাকা ছিল। বাকিদের মুখ খোলা ছিল। কিন্তু আমরা চিনতে পারি নাই। লোকগুলো মনে হয় বাইরের দূরের লোক। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল। তারা প্রথমে মোবাইল আর শ্যালোর হ্যান্ডেল নিয়া নদীতে ফেলায় দেয়। কয়েকজনকে মারধর করে। আমরা জীবন বাঁচাইতে কিছু করতে পারি নাই।’ ডাকাতির বর্ণনা দিয়ে বলেন মইজুদ্দি।
নৌকার মাঝি সবুর মিয়া বলেন, ‘নৌকায় ১৮ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে একজন নারী। সবাই কুড়িগ্রামে ইজতেমায় অংশ নিতে যাইতেছিল। দুইশ বিঘার মাথার কাছে যাওয়ার পর দুইটা নৌকায় ১৬-১৭ জন ডাকাত হামলা করে। সবার হাতে অস্ত্র ছিল। তাদের হাতে পিস্তল, ফালা, রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। প্রথমে তারা মোবাইল আর ইঞ্জিনের হ্যান্ডেল কাইড়া নিয়া নদীতে ফেলায় দেয়। দুইটা ইঞ্জিনের একটা ভাঙচুর করে। কয়েকজন যাত্রীকে মারধর করে। সবার কাছে থাকা টাকাপয়সা কাইড়া নেয়। আমার কাছে থাকা ২৫ হাজার টাকা, ২৫ লিটার ডিজেল এবং দুইটা হ্যান্ডেল ও পলিথিন নিয়া তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।’
ডাকাতির স্থানের বর্ণনা দিয়ে মাঝি বলেন, ‘তখন নদীতে ঘন কুয়াশা। দুইশ বিঘার মাথার কাছে ডান তীরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলের কিছু দূরে উত্তর খাউরিয়ার চরের পশ্চিম দিকের জনবসতি। উল্টোদিকে বামতীরে হকের চর। পিছনে নয়ারহাট। কিন্তু আমরা কাউকে ডাকতে পারি নাই।’
সবুর আরও বলেন, ‘ডাকাতি কইরা চইলা যাওয়ার পরপর রৌমারী থাইকা পুলিশের একটা নৌকা কুড়িগ্রামের দিকে গেছে। তারাও শুইনা গেছে। ঘটনার পরে আরেকটা নৌকা থাইকা হ্যান্ডেল নিয়া নৌকায় থাকা আরেকটা ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়া রৌমারীতে ফিইরা আসছি।’
পুলিশে অভিযোগ করা প্রশ্নে মাঝি সবুর ও যাত্রী মইজুদ্দি বলেন, ‘এর আগে ২০০০ সালের দিকে নৌ-ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশকে অভিযোগ দিলেও কোনও ফল পাওয়া যায় নাই। শুধু শুধু কোর্টে গিয়া উল্টা আমরা হয়রানি হইছি। এজন্য আর পুলিশে অভিযোগ দেই নাই।’
ঢুষমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশাহেদ খান বলেন, ‘খবর শোনার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের কাছে খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু স্থানীয়রা কেউ কিছু বলতে পারছে না।’
ডাকাত দলের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘এই অঞ্চলে এ ধরনের অস্ত্র নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রৌমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা সহকারী উপ-পরির্দশক (এএসআই) এরশাদ আলম বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে ডাকাতির ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। তবে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। কেউ অভিযোগ দেয়নি।’