নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে ১৬১ সুপারিশের মধ্যে ৮২টি বাস্তবায়িত

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০২:২৭ অপরাহ্ণ   |   ২৯ বার পঠিত
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে ১৬১ সুপারিশের মধ্যে ৮২টি বাস্তবায়িত

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ১৬১টি সুপারিশের মধ্যে অন্তত ৮২টি বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী আদেশে ১৩টি সুপারিশ কার্যকর হয়েছে, আর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিভিন্ন আইন-বিধি সংশোধনের মাধ্যমে অন্তত ৬৯টি সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়েছে। কিছু সুপারিশের ক্ষেত্রে আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে।
 

আজ সোমবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় ইসি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সংস্কার কমিশনের আরও কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 

জাতীয় সনদের বিভিন্ন দফায় অন্তত ২০টি সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বা আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনেক সুপারিশ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে মিলেছে, ফলে একত্রে সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে, কমিশনের কমপক্ষে ৪৯টি সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, এবং ১০টির মতো সুপারিশ ভবিষ্যতে কার্যকর হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ আছে।
 

কমিশন গঠন ও কার্যক্রম:
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী সংস্কারসহ ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। তার মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন অন্যতম। পরে ৩ অক্টোবর সুজনের সম্পাদক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। কয়েক দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করার পর গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের কার্যক্রম শেষ হয়। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও শিক্ষাবিদদের পরামর্শের ভিত্তিতে কমিশন ১৮টি ক্ষেত্রে ১৬১টি সুপারিশ করে।

 

উল্লেখযোগ্য বাস্তবায়ন:

  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা তৈরি।

  • ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ১৮ বছর বয়সপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি।

  • প্রার্থীদের হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিল।

  • প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিত।

  • নির্বাচনে জোট থাকলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট, ভোট ব্যয়ের নির্ধারণ এবং প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সরাসরি দাখিলের ব্যবস্থা।

  • ইসি কর্মকর্তাদের পৃথক সার্ভিস, নির্বাচনী ব্যয়ের অডিট, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও এআই ব্যবহার করে মিথ্যাচার রোধের বিধান।
     

বাস্তবায়ন হয়নি:

  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটির ভোটার পদত্যাগের সুপারিশ।

  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্যতা।

  • অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ।

  • বিতর্কিত দলের নিবন্ধন বাতিল বা নতুন দলের নিবন্ধন শর্ত শিথিল করা।

  • দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিন বছরের সদস্য পদ বাধ্যতামূলক করা।
     

কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সুপারিশের অধিকাংশই উপেক্ষিত হয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, আর্থিক স্বচ্ছতা ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি।”
 

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আবদুল আলীম উল্লেখ করেন, “দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে আরও গণতান্ত্রিক করা এবং নিবন্ধনের শর্তাবলী কার্যকর করা গেলে নির্বাচন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসতো। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি, তবে জুলাই সনদ কার্যকর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
 

সংক্ষেপে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে অর্ধেকের বেশি সুপারিশ কার্যকর হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ এখনো বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।