দীর্ঘ অভিনয়জীবনে কখনোই বিরতি আসেনি তাঁর। বয়সের ভার, শারীরিক সমস্যাও থামাতে পারেনি অভিনয়ের প্রতি মিরানা জামানের ভালোবাসা। ৯০ বছর বয়সেও ক্যামেরার সামনে তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। সম্প্রতি তিনি অভিনয় করেছেন ‘মৃত্তিকার যাত্রা’ নামের একটি টেলিছবিতে।
ইলোরা গহরের রচনায় নির্মিত এই টেলিছবিটি পরিচালনা করেছেন কাশেফ শাহবাজী। ঢাকার আফতাব নগর, মিরপুর বধ্যভূমি, শেখের টেকসহ বিভিন্ন স্থানে এর দৃশ্যধারণ সম্পন্ন হয়েছে। কাহিনিতে উঠে এসেছে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব, যেখানে ছাত্র-জনতা রুখে দাঁড়ায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। টেলিছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে মিরানা জামান আন্দোলনের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠেন, যেখানে তাঁকে ওমর সানীর মায়ের ভূমিকায় দেখা যাবে।
মিরানা জামান বলেন,
"অভিনয় আমার ভালোবাসার জায়গা। এটা ছাড়া থাকতে পারি না। তাই এখনও মাঝেমধ্যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। এবার শুটিং করেছি খাটেই বসে। বয়স বাড়ছে, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে, হাঁটতে লাঠির প্রয়োজন হয়, হাঁটুতে ব্যথা—সবই সঙ্গী হয়ে উঠেছে। দাঁড়াতে কষ্ট হয়। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি। যাঁরা একসময় খোঁজখবর নিতেন—শর্মিলী আহমেদ, মাসুদ আলী খান—তাঁরাও আজ নেই। আমিও জানি, একদিন চলে যেতে হবে। তবুও বলব, জীবন আমাকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দিয়েছে।"
এর আগে ইলোরা গহরের রচনায় ও পরিচালনায় ‘ভিটা বাড়ি’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন মিরানা জামান, যা সম্প্রচার হয়েছিল গত ঈদুল আজহায়।
‘মৃত্তিকার যাত্রা’ টেলিছবিতে মিরানা জামানের পাশাপাশি আরও অভিনয় করেছেন ইলোরা গহর, ওমর সানী, আতিক, চৈতি, খালেদা আক্তার কল্পনা প্রমুখ। টেলিছবিটি ২৮ জুন রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত হবে।
১৯৩৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মিরানা জামান। ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ বেতারে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু। চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ‘জাহান বাজে শেহনাই’ ছবির মাধ্যমে। এরপর ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘সুপ্রভাত’, ‘গেরিলা’সহ বহু চলচ্চিত্রে তিনি অনবদ্য অভিনয় উপহার দিয়েছেন।
২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শিখণ্ডি কথা’ ছিল তাঁর শেষ চলচ্চিত্র। অসংখ্য নাটক ও টেলিছবিতে তাঁর উপস্থিতি বাংলা নাট্যজগতকে করেছে সমৃদ্ধ। ২০২০ সালে বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তিনি লাভ করেন ‘বুলবুল আহমেদ পুরস্কার’সহ বহু সম্মাননা।
নব্বইয়ের গণ্ডি পেরিয়েও যাঁর মনে আছে শিল্পের দীপ্তি, তিনি মিরানা জামান—এক সত্যিকারের কিংবদন্তি।