রোহিঙ্গা যুবক এনআইডি বানিয়ে সরকারি চাকরিতে

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৪:০৫ অপরাহ্ণ   |   ৯১ বার পঠিত
রোহিঙ্গা যুবক এনআইডি বানিয়ে সরকারি চাকরিতে

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:



 

কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনের কোনপাড়া এলাকার রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল আজিজ বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তরের আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ২০১৭ সালে আলী আহমদকে বাবা এবং নুর নাহারকে মা দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে।
 

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজিজ বর্তমানে সেন্টমার্টিন বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মী এবং জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের মেরিন পার্কে আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
 

স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, আব্দুল আজিজ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক মো. আব্দুলের ছেলে। ১৯৯২ সালে তার বাবা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন এবং ২০০০ সালে মারা যান। পরে ২০০১ সালে আলী আহমদ তার মাকে বিয়ে করেন। ২০১৭ সালে আজিজ এনআইডি তৈরি করার সময় আলী আহমদকে বাবা এবং নুর নাহারকে মা দেখিয়েছে। এনআইডিতে জন্মসাল ১৯৯২ উল্লেখ করা হলেও এটি প্রকৃত বয়স নয়।
 

আলী আহমদ বলেন, “আজিজ আমার ছেলে নয়, মূলত সে মিয়ানমারের নাগরিক। শুনেছি দালাল চক্রের মাধ্যমে এনআইডি বানিয়েছে। তবে আমি বিষয়টি জানি না।” স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসেম বলেন, “আজিজ রোহিঙ্গা নাগরিক হলেও প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় এনআইডি বানিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।”
 

সড়ক নির্মাণকাজে চাঁদা দাবি

পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা করে। চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এফএক্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্বীপের গলাচিপা থেকে এসকেডি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, নির্মাণকাজের সময় আজিজ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচয় দেখিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ‘সিমেন্ট-তেল’ দাবির চেষ্টা করেছেন। ঠিকাদার এফএক্স-এর ব্যবস্থাপক বসন্ত দে বলেন, “তার দাবি মেনে নেওয়া হয়নি এবং কাজ শেষে উপকরণ দেওয়া হবে বলে বলা হয়েছে।”
 

সরকারি চাকরিতে অনিয়ম

আজিজ একই সময়ে সেন্টমার্টিনে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে কাজ করছেন, যা চাকরির নিয়ম বিরুদ্ধ। ২০২২ সালের শেষের দিকে জেলা প্রশাসক তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিলেন। তবে কয়েক মাসের মধ্যে আবারও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজে যুক্ত হয়েছেন।
 

আব্দুল আজিজ দাবি করেন, “আমি কারও কাছ থেকে চাঁদা দাবি করিনি। এনআইডি সঠিক তথ্য ও কাগজপত্র দিয়ে তৈরি করেছি। আলী আহমদ আমার প্রকৃত বাবা নন।”
 

প্রশাসনের মন্তব্য

টেকনাফ ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “ভুল তথ্য দিয়ে এনআইডি তৈরি অপরাধ। চাঁদা দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, “আব্দুল আজিজ আমাদের আউটসোর্সিং কর্মী। রোহিঙ্গা যুবক হওয়ার অভিযোগ আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”


কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, “চাঁদা দাবি ও রোহিঙ্গা হওয়ার অভিযোগ দুটোই তদন্তের পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”