ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতার বিষয়টি আপাতত সামনে আসেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ ও দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড। ব্যক্তিগত কোনো কারণ আছে বলে মনে হয়নি। ঘটনার শুরু থেকেই আমরা মাঠে আছি। সব সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে এবং সম্ভাব্য সব দিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
তিনি জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিককে ৫৪ ধারার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। হত্যাকারীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, “ফয়সাল ও আলমগীরকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। অপরাধীরা প্রায়ই নিজেদের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। ফয়সালের বাবা মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট পরিবর্তন করেছিলেন। পরে যাচাই-বাছাই করে আসল নম্বরপ্লেট শনাক্ত করা হয়েছে। বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তদন্ত চলছে।”
উদ্ধার করা চেক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চেকগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির নামে হলেও কোনো অ্যাকাউন্টে অর্থ নেই। যাদের নামে চেক, তারা তারিখ ছাড়া স্বাক্ষর করে রেখেছিলেন। এসব অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।”
এদিকে অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাকারী ফয়সালের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। “সে দেশের বাইরে চলে গেছে—এমন কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের কাছে নেই। বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা থাকে, তাই যাচাই করে এগোচ্ছি,” বলেন তিনি।
র্যাবের মুখপাত্র উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, ঘটনার দিন ফয়সাল নরসিংদীর গ্রিনজোন রিসোর্ট থেকে আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় যান। ফয়সালের শ্যালক শিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাচেষ্টার পর ব্যবহৃত পিস্তলের ব্যাগটি পর্যায়ক্রমে বাবার মাধ্যমে শিপু এবং পরে শিপুর বন্ধু মোহাম্মদ ফয়সালের কাছে যায়। ভয়ে তিনি ব্যাগটি বিলে ফেলে দেন।
বিজিবি ময়মনসিংহ রিজিয়নের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হত্যাকারী ময়মনসিংহে এসেছে—এমন তথ্য পাওয়ার পর রাতভর যৌথ অভিযান চালানো হয়। কল হিস্ট্রি ধরে অভিযান পরিচালিত হলেও সে রাতে ফিলিপকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, ফিলিপ সীমান্ত এলাকায় মানব পাচার ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে; তাকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। জেমি চিসিংসহ আরও কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে শরীফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
