গত বছরের ৫ আগস্টের আন্দোলনের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করায় তারা আয়োজনের বেশিরভাগ কাজ গুছিয়ে ফেলেছে। বিএনপি গণসংযোগ শুরু করলেও এখনও প্রার্থী চূড়ান্তকরণ, পোলিং এজেন্ট নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে সদ্য গঠিত এনসিপি (ন্যাশনাল কর্পোরেট পার্টি) সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
যদিও বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট বা নির্বাচনী সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আপাতত এনসিপি এককভাবেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, তবে দলের বাইরে থাকা যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরও প্রার্থী হিসেবে শাপলা কলি প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে সাড়ে আট মাস আগে গঠিত এনসিপি ইতোমধ্যে ১০ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এবং ১৬টি উপকমিটি গঠন করেছে। প্রতীক সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ চলছে।
এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা—আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আবদুল হান্নান মাসউদ, সারোয়ার তুষার, আতিক মুজাহিদ এবং ডা. মাহমুদা মিতুসহ অনেকে আগে থেকেই নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
দলের সূত্র মতে, আগে থেকেই সক্রিয় নেতাদের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। এখন পর্যন্ত ১,৪৮৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, যার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ১০টি বোর্ড কাজ করছে। একই আসনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকলে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই ১০০–১৫০ আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতে পারে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান—
চিকিৎসক, শিক্ষক, আলেমসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রার্থী হচ্ছেন
এলাকায় জনসম্পৃক্ততা ও জনগণের জন্য কাজ করার ইতিহাস বিবেচনায় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে
বিজয়ের সম্ভাবনা থাকলে প্রার্থী করা হবে
শুধু সংসদ নয়, ভবিষ্যতে পৌরসভা, উপজেলা ও কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্যও একটি প্রার্থী ডেটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, প্রার্থীর—
পূর্ব রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড,
নির্বাচনী পরিকল্পনার জ্ঞান,
মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা এবং
খরচ পরিচালনার সক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে।
যারা নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন ধারণ করেন, তাদেরই সর্বোচ্চ মূল্যায়ন দেওয়া হবে।
গত ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক দফা আন্দোলনের দিনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা ও ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। এতে উল্লেখিত প্রধান বিষয়গুলো হলো:
✔ নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক
✔ জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার
✔ গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার
✔ বিচার ও আইন ব্যবস্থার উন্নয়ন
✔ দুর্নীতি দমন ও সেবামুখী প্রশাসন
✔ স্বাধীন গণমাধ্যম, শক্তিশালী স্থানীয় সরকার
✔ নতুন শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যসেবা, উদ্ভাবন ও আইটি বিপ্লব
✔ ধর্মীয় ও জাতিসত্তার মর্যাদা
✔ নারীর অধিকার, কল্যাণভিত্তিক অর্থনীতি, কর্মসংস্থান
✔ পরিবেশ ও জলবায়ু সহনশীলতা
✔ প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার
✔ বাংলাদেশকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল
এই ২৪ দফার আলোকে বিস্তারিত নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে।
এনসিপি নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। নির্বাচনী পরিবেশ উন্নত করা ও নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, শুধু বিএনপি ও জামায়াত নয়—এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং আপ বাংলাদেশের সঙ্গেও জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে লাভজনক হবে, সেখানেই জোট; অন্যথায় দল এককভাবে মাঠে নামবে।
অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর জানান—
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল থেকে ২০ জন নেতা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন
তারা সারাদেশে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবেন
ভোটের শুরু থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এজেন্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে
এনসিপি প্রার্থীদের কম খরচে প্রচারণার কৌশল শেখাবে। অসচ্ছল প্রার্থীদের সহায়তার জন্য ক্রাউড ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করবে দল। এতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
হুমায়রা নূর জানান, দলীয় নির্বাচন ফান্ডও মূলত ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমেই পরিচালিত হবে।
এনসিপি আপাতত একক নির্বাচনে প্রস্তুত হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী জোটেও যেতে পারে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী যাচাই–বাছাই, ইশতেহার প্রণয়ন, এজেন্ট প্রশিক্ষণ এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ—সব দিকেই দলটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।