জুবায়েদ হত্যার মূল রহস্য উন্মোচন: প্রেমঘটিত পরিকল্পিত খুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২১ অক্টোবর ২০২৫ ০৪:১৩ অপরাহ্ণ   |   ৩৩ বার পঠিত
জুবায়েদ হত্যার মূল রহস্য উন্মোচন: প্রেমঘটিত পরিকল্পিত খুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইন হত্যা মামলার রহস্য অবশেষে উন্মোচন করেছে পুলিশ। প্রেমঘটিত সম্পর্কের জটিলতা থেকেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
 

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস. এন. মো. নজরুল ইসলাম।
 

🔹 হত্যার নেপথ্যে প্রেমের ত্রিভুজ

পুলিশ জানায়, জুবায়েদকে খুনের পরিকল্পনা করেন তার টিউশনের ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা ও বর্ষার প্রেমিক মাহীর রহমান।
বর্ষা মূলত মাহীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। কিন্তু টিউশনির মাধ্যমে জুবায়েদের সঙ্গে পরিচয়ের পর তিনিও জুবায়েদের প্রেমে পড়েন। বিষয়টি মাহীর জানতে না পারলেও পরবর্তীতে তা তার নজরে আসে। এরপর বর্ষা মাহীরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও তাকে ভুলতে পারেননি।

 

কিছুদিন পর বর্ষা আবার মাহীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়— জুবায়েদকে আর ভালো লাগে না, তবে তাকে (মাহীরকে) ফিরে পেতে হলে জুবায়েদকে ‘সরাতে’ হবে। এই বক্তব্য থেকেই হত্যার পরিকল্পনা শুরু হয়।
 

২৫ সেপ্টেম্বর দুজন মিলে পরিকল্পিতভাবে জুবায়েদকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য নতুন দুটি সুইচগিয়ার চাকু কেনা হয়। ওই অস্ত্র দিয়েই এলোপাতাড়ি আঘাত করে জুবায়েদকে নির্মমভাবে খুন করা হয়।
 

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন,

“ঘটনাটি আলোচিত মিন্নি মামলার মতোই ত্রিভুজ প্রেমঘটিত হত্যাকাণ্ড। বর্ষাই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।”

লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি জানান,

“হত্যার সময় বর্ষা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এবং পুরো ঘটনাটি সে প্রত্যক্ষ করেছে।”


🔹 ৪১ ঘণ্টা পর মামলা

জুবায়েদ হত্যার ৪১ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বংশাল থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত। মামলায় বর্ষা (১৯), তার প্রেমিক মাহীর রহমান (১৯) এবং ফারদীন আহমেদ আয়লান (২০)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও চার থেকে পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
 

🔹 মামলার এজাহারের তথ্য

জুবায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করতেন। ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি বংশালের নুর বক্স লেনের রৌশান ভিলায় ছাত্রী বর্ষাকে পড়াতে যান। সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে বর্ষা জুবায়েদের ভাই সৈকতকে মেসেঞ্জারে জানান,

“স্যারকে কে যেন খুন করে ফেলছে।”

পরে খবর পেয়ে সৈকত ও তার আত্মীয়রা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভবনের তৃতীয় তলার সিঁড়িতে জুবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। তার গলার ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণেও হত্যাকাণ্ডের পূর্বপরিকল্পনার প্রমাণ মিলেছে বলে জানায় পুলিশ।


🔹 জুবায়েদ সম্পর্কে

জুবায়েদ এক বছর ধরে বর্ষাকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াতেন। বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন। নিহত জুবায়েদ কুমিল্লার হোমনা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে।
 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে সোমবার রাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।