কুরআন- হাদিসের আলোকে রোযা রাখার ফযীলত

প্রকাশকালঃ ১০ মার্চ ২০২৪ ০৫:৫০ অপরাহ্ণ ২৫৯ বার পঠিত
কুরআন- হাদিসের আলোকে রোযা রাখার ফযীলত

রোযার ফযীলত

পবিত্র ক্বোরআনে করীম এবং হাদীসে নবভী শরীফে রোযার অপরিসীম ফযীলত,বরকত ও মহিমা বিবৃত হয়েছে, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় রোযা একটি অতীব বরকতময় ও তাৎপর্যবহ ইবাদত। নিম্নে তার কিছুটা আলোচনা করা হলো। 

 

আল্লাহ পাক মজীদে এরশাদ করেছেন-

 

অর্থ্যাৎঃ- ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয হয়েছিলো; যাতে তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হয়। নির্দিষ্ট দিনসমূহ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ রুগ্ন হও কিংবা সফরে থাকো, অতঃপর ততসংখ্যক রোযা অন্যান্য দিনসমূহে। আর যাদের মধ্যে এর সামর্থ্য না থাকে তারা এর বিনিময়ে দেবে একজন মিসকীনের খাবার। অতঃপর যে ব্যক্তি নিজ থেকে সৎকর্ম অধিক করবে, তবে তার জন্য উত্তম এবং রোযা রাখা তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর, যদি তোমরা জানো।

 

রমযান মাস, যাতে ক্বোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, মানুষের জন্য হিদায়ত ও পথ-নির্দেশ এবং মীমাংসার সুস্পষ্ট বাণীসমূহ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই সেটার রোযা পালন করে। আর যে ব্যক্তি রুগ্ন হয়, কিংবা সফরে থাকে, তবে তত সংখ্যক রোযা অন্যান্য দিনসমূহে। আল্লাহ্ তোমাদের উপর সহজই চান এবং তোমাদের উপর ক্লেশ চান না; আর এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূরণ করবে এবং আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করবে, এর উপর যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়ত করেছেন  আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও। [সূরা বাক্বারা, আয়াত- ১৮৩, ১৮৪ ও ১৮৫]

 

উপরোক্ত আয়াতে করীমার আলোকে প্রমাণিত হয়,বছরে সুনির্দিষ্ট এক মাস মাহে রমযান শরীফে সিয়াম পালনের সার্থকতা ও সাফল্য হলো পরবর্তী লফগ্ধহ তাক্বওয়া নির্ভর জীবন অতিবাহিত করা। যে তাক্বওয়া পরহেযগারী আল্লাহ ও তাঁর প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু তাঞ্চআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকালীন জীবনের শান্তি এবং মুক্তি অর্জনের মহা অবলম্বন। সিয়ামের সাফল্য নাফ্‌সের কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ও তাক্বওয়া ভিত্তিক জীবন চর্চার মধ্যে নিহিত।

 

হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম

 

অর্থাৎ (সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা) হযরত আবূ গ্গশৎরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তাঞ্চআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল-ই আকরাম নূরে মুজাস্‌সাম সাল্লাল্লাহু তাঞ্চআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- আদম সন্তানের সকল নেক আমলের সাওয়াব বর্ধিত করা হয়। একটি নেক আমলের সাওয়াব দশগুণ থেকে সাতশতগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রদান করা হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন কিন্তু রোযার বিষয় ব্যতিক্রম। কেননা, রোযা আমারই জন্য। আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। রোযাদার আমার উদ্দেশ্যে তার মনের কামনা-বাসনার বস্তু ও পানাহার বর্জন করে। রোযাদারের জন্য দুই প্রকারের বিশেষ আনন্দ রয়েছেঃ এক প্রকারের আনন্দ ইফতারের সময় আর দ্বিতীয় প্রকারের আনন্দ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দীদার-দর্শন লাভের মুহূর্তে। [সহীহ্‌ বোখারী ও মুসলিম শরীফ]

 

উপরোক্ত হাদীসের আলোকে প্রতীয়মান হয় রোযা একটি ব্যতিক্রমধর্মী এবাদত। অন্যান্য সকল নেক আমলের মধ্যে রিয়া-লৌকিকতার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু রোযার মধ্যে লৌকিকতার সম্ভৎবনা নেই। অন্যান্য নেক আমলের প্রতিদান জান্নাত; কিন্তু রোযার প্রতিদান হলো আল্লাহ পাকের দীদার-দর্শন ও সন্তুষ্টি।

 

অর্থাৎ সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল-ই পাক সাহেবে লাওলাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, রোযা ও ক্বোরআন (ক্বিয়ামত দিবসে) রোযাদারের জন্য (আল্লাহ্‌র দরবারে) সুপারিশ করবে। রোযা আরয করবে- হে রাব্বুল আলামীন! আমি আপনার এ বান্দাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের কামনা-বাসনার বস্তু গ্রহণ করা থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, আজ আমার সুপারিশ তার পক্ষে কবূল করুন। আর ক্বোরআন বলবে- আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, আমার সুপারিশ তার পক্ষে কবূল করুন! অতঃপর রোযা ও ক্বোরআন উভয়ের সুপারিশ রোযাদারের পক্ষে কবূল করা হবে । [বায়হাক্বী, শুজ্ঞআবুল ঈমান]

 

এ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হলো- রোযা এমন একটি আমল, যা ক্বিয়ামত দিবসের কঠিন মুশূর্তে আল্লাহর দরবারে রোযাদারের মুক্তির নিমিত্তে গ্রহণযোগ্য সুপারিশকারী হবে। অর্থাৎ (নবী প্রেমে নিবেদিতপ্রাণ সাহাবী সাইয়্যেদুনা) হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল-ই করীম রঊফুর রহীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, প্রতিটি বস্তুর যাকাত রয়েছে। আর দেহের যাকাত হলো রোযা। [ইবনে মাজাহ শরীফ]

 

এ হাদীসে রোযাকে দেহের যাকাতরূপে গণ্য করে মু’মিন নর-নারীদের সুসংবাদ দেয়া হলো যেভাবে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র, ধ্বংসের হাত থেকে নিরাপদ এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তেমনি রোযা পালনের মধ্য দিয়ে দেহ পাপ-পঙ্কিলতার কালিমা হতে পবিত্র, স্বাস্থ্যহানিকর রোগ-ব্যাধি হতে মুক্ত এবং আত্মিক শান্তি বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ রাসূলে খোদা হাবীবে কিবরিয়া সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ইফতারের সময় রোযাদারের জন্য একটি মাক্ববূল দো’আ রয়েছে। [আবূ দাউদ শরীফ]

 

অর্থাৎ (আসহাবে সুফ্‌ফার অন্যতম সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা) হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে খোদা আশরাফে আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রকৃত ও পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের প্রত্যাশায় মাহে রমযানেভ রোযা পালন করবে তার জীবনের পূর্ববর্তী সমুদয় গুনাহ্‌ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় মাহে রমযানের রাত জেগে ইবাদত করবে তার জীবনের পূর্ববর্তী সমুদয় পাপ মার্জনা করা হবে। আর যে ব্যক্তি প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ ঈমান সহকারে সওয়াব লাভের আশায় শবে ক্বদরে ইবাদত-বন্দেগী করবে তার অতীত জীবনের সকল পাপ ক্ষমা করে দোয়া হবে।[সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফ]

 

এ হাদীসে বারংবার ঈমানকে পূর্বশর্ত করে মু’মিনকে তাগিদ দেয়া হলো যে, ঈমানদারের শারিরীক, আর্থিক ও আত্মিক সকল প্রকার ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট কবুল হয়ে পরকালীন জীবনে নাজাতের অবলম্বন হওয়ার পূর্বশর্ত হলো সঠিক ও বিশুদ্ধ ঈমান আক্বীদার অধিকারী হওয়া। ঈমান বিহীন আমল অমুসলিমদের জনহিতকর ও সমাজ কল্যাণমূলক সৎকর্মের ন্যায়। আল্লাহ- রাসূলের দরবারে এহেন সৎকর্মের কোনরূপ গ্রহণযোগ্যতা নেই। উপরোক্ত হাদীসে আরো সুসংবাদ দেয়া হলো যে, মাহে রমযান শরীফে দিনের বেলায় রোযা পালন, রাতে নফল ইবাদত এবং শবে ক্বদরের ইবাদত-বন্দেগী মু’মিন নর-নারীর জীবনের সমুদয় পাপের পাওয়ার গ্যারান্টি।

 

অর্থাৎ (প্রসিদ্ধ সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা) হযরত সাহ্‌ল ইবনে সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্‌সাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, বেহেশতে আটটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে একটির নাম হলো ‘রাইয়্যান’, যা দ্বারা একমাত্র রোযাদারগণ বেহেশতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য অর্জন করবে। [সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফ]

 

অর্থাৎ প্রসিদ্ধ সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক সাহেবে লাওলাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে স্বেচ্ছায় একটি মাত্র রোযা পালন করবে আল্লাহ পাক তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বের ব্যবধানে সরিয়ে রাখবেন। [সহীহ্‌ বুখারী ও মুসলিম শরীফ]

 

অর্থাৎ- প্রসিদ্ধ সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ উমামা বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে খোদা ইমামুল আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মাত্র রোযা পালন করবে আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার এবং জাহান্নামের মধ্যে আসমান-যমীনের মধ্যবর্তী বিশাল ব্যবধানের ন্যায় একটি গর্ত সৃষ্টি করে দেবেন. (যাতে রোযাদার জাহান্নামের তাপ ও গন্ধ কিছুই উপলব্ধি করতে না পারে।) [তিরমিযী শরীফ]

 

উপরোক্ত হাদীসে নবপী শরীফের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢাল স্বরূপ। যেমন, অন্য রেওয়ায়তে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-اَلصِيَّامُ جُنَّةٌ অর্থাৎ- রোযা ঈমানদারের জন্য ঢাল স্বরূপ।

 

অর্থাৎ হাদীসে নবভী শরীফের একনিষ্ঠ খাদেম সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ গ্গশৎরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম রউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, (রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে নাজাতের সওগাত নিয়ে) যখন মাহে রমযান শুরু হয়, তখন আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়। আর এক রেওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করা হয়। অন্য রেওয়ায়তে রয়েছে- রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। [সহীহ্‌ বোখারী, সহীহ মুসলিম ও মিশকাত শরীফ]

 

অর্থাৎ (প্রসিদ্ধ সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা) হযরত সালমান ফারেসী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাহে শা’বানের শেষ দিবসে আমাদের সম্মুখে খুত্‌বা প্রদানকালে এরশাদ করলেন, হে মানব জাতি! তোমাদের উপর একটি আযীমুশ্‌শান বরকতময় মাস ছায়া বিস্তার করেছে, যে মাসে সহস্র মাসের চেয়েও অধিক উত্তম একটি রজনী রয়েছে। (অর্থাৎ শবে ক্বদর) এ মাসে রোযা পালনকে আল্লাহ পাক ফরয এবং রাতে ইবাদত করাকে নফলরূপে সাব্যস্ত করেছেন। যে ব্যক্তি এ মহিমান্বিত মাসে একটি নফল আদায় করে নৈকট্য অর্জনে তৎপর হবে সে অন্যান্য মাসে ফরয আদায়কারীর ন্যায় প্রতিদান পাবে। আর যে ব্যক্তি এমাসে একটি ফরয আদায় করবে সে অন্য মাসের ৭০টি ফরয আদায়কারীর সমান সাওয়াব পাবে। এটা সবর ও সংযমের মাস আর সবরের প্রতিদান হলো জান্নাত। এটা পরস্পর সহমর্মিতার মাস। এটা মুমিনের রিয্‌ক্ব বৃদ্ধি পাবার মাস। [বায়হাক্বী শরীফ, শু’আবুল ঈমান এর বরাতে মিশকাত শরীফ, সিয়াম অধ্যায়]

 

অর্থাৎ মুফাস্‌সিরকুল সরদার সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্‌সাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র মক্কা মুকাররমায় মাহে রমযান শরীফ পাবে এবং দিনের বেলায় রোযা পালন করবে ও রাতের বেলায় যতটুকু সম্ভব নফল ইবাদত করবে আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার আমলনামায় অন্য স্থানের এক লক্ষ রমযানের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেবেন এবং প্রতিদিন একটি গোলাম আযাদ করার এবং প্রতিদিন জেহাদের জন্য ঘোড়ায় সাওয়ার হবার সাওয়াব লিবিপদ্ধ করে দেবেন এবং প্রতি দিবা-রজনী তার আমল নামায় সওয়াব লিবিপদ্ধ করা হবে।[ইবনে মাজাহ শরীফ]

 

প্রসিদ্ধ সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে খোদা আশরাফে আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, পবিত্র মাহে রমযান শরীফে আমার উম্মতকে এমন পাঁচটি বিষয়  দেয়া হয়েছে, যা আমার পুর্ববর্তী অন্য কোন নবীকে দান করা হয়নিঃ

 

প্রথমতঃ মাহে রমযানের প্রথম রজনীতে আল্লাহ পাক আমার উম্মতের প্রতি দয়ার নজরে তাকান। যার প্রতি আল্লাহর রহমতের নজর পতিত হবে তাকে কখনো আযাব দেবেন না।

 

দ্বিতীয়তঃ রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের চেয়েও অধিক উত্তম।

 

তৃতীয়তঃ প্রতি দিবা-রজনী ফিরিশতারা রোযাদারের জন্য মাগফিরাত কামনা করে থাকেন।

 

চতুর্থতঃ আল্লাহ পাক জান্নাতকে হুকুম দিয়ে বলেন, হে বেহেশত! তৈরী হও, আমার রোযাদার বান্দাগণের জন্য সৌন্দর্যমণ্ডিত হও। অতি সত্বর তাঁরা দুনিয়ার ক্লান্তি হতে এখানে এসে যেন বিশ্রাম নিতে পারে।

 

পঞ্চমতঃ যখন শেষ রাত্রি হয় তখন আল্লাহ পাক সকল রোযাদারকে ক্ষমা করে দেন। কেউ আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এটা কি শবে ক্বদরে? জবাবে হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু তাঞ্চআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, না তুমি কি দেখতে পাওনা দায়িত্ব পালনকারী দায়িত্ব পালন শেষে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে? [বায়হাক্বী শরীফ]

 

সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ উমামা বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর-খিদমতে আরয করলাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কোন নেক আমলের হুকুম দিন।’’ আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘রোযা পালন করাকে নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও। কেননা, তার সমান আর কোন আমল নেই। আমি পুনরায় আরয করলাম, ‘‘আমাকে কোন নেক আমলের হুকুম দিন।’’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পুনরায় এরশাদ করলেন, ‘‘রোযা পালনকে বাধ্যতামূলক করে নাও।কারণ সেটার সমতুল্য অন্য কোন নেক আমল নেই।’’ আমি আবার একই প্রশ্ন করলে তিনিও আমাকে একই আমলের হুকুম দিলেন।[নাসাঈ শরীফ, সহীহ ইবনে খুযায়মা ও হাকেম]

 

প্রসিদ্ধ সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ মাস’ঊদ গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূল বর্ণনা করেছেন- সেখানে রয়েছে, রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্‌সাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহর বান্দারা যদি জানতো রমযান কি জিনিষ, তবে আমার উম্মত কামনা করতো যেন পুরো বছরই রমযান হয়ে যায়।’’[সহীহ ইবনে খুযায়মা]

 

সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক সাহেবে লাওলাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ পাকের নিকট আমল সাত প্রকার। তন্মধ্যে দু’ প্রকারের আমল ওয়াজিবকারী। আর দু’ প্রকারের আমলের প্রতিদান বরাবর। আরেক প্রকারের আমলের বদলা দশ গুণ। অন্য এক প্রকারের আমলের প্রতিদান সাতশ’ গুণ। আরেক প্রকারের আমল এমন রয়েছে, যার সাওয়াব আল্লাহ পাকই জানেন। অতএব ওইগুলো হচ্ছে-

 

১. বান্দা এমন অবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে মিলিত হবে, যখন সে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করতো এবং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করতো না। তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব।

২. বান্দা এমতাবস্থায় আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, যখন সে আল্লাহর সাথে শরীক করতো, তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব।

৩. যে ব্যক্তি অসৎ কর্ম করে তার সাজাও অসৎ কর্মের সম পরিমাণ।

৪. যে ব্যক্তি নেক আমলের নিয়্যত করেছে, কিন্তু নেক আমল করেনি তাকে একটি নেক আমলের সাওয়াব দান করা হবে।

৫. আর যে ব্যক্তি নেক আমল করেছে তাকে দশ গুণ সওয়াব দেয়া হবে।

৬. যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করেছে তাকে সাতশ’ গুণ সাওয়াব দেয়া হবে। এক দিরহাম ব্যয় করলে সাতশ’ দিরহামের সাওয়াব এবং এক দিনার ব্যয় করলে সাতশ’ দিনার ব্যয়ের সাওয়াব দেয়া হবে।

৭. আর রোযা একমাত্র আল্লাহরই জন্য। এর সাওয়াব (কত অপরিসীম তা) আল্লাহই জানেন। (তাই তিনিই সেটার প্রতিদান দেবেন।)

[ত্বাবরানী ফিল আওসাত ও বায়হাক্বী শরীফ]