‘রেহনুমা’ দিয়ে শুরু। ২০২০ সালের ভালোবাসা দিবসে নাটকটি প্রচারের পর তিন বছর পার হয়েছে। এর মধ্যে নির্মাতা ভিকি জাহেদ, অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীকে দেখা গেছে ‘চিরকাল আজ’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘পুনর্জন্ম’ ফ্র্যাঞ্চাইজির মতো আলোচিত কাজে। এই নির্মাতা-অভিনেত্রী জুটির সর্বশেষ কাজ ‘আমি কী তুমি’ও মুক্তির পর সাড়া ফেলেছে। আইস্ক্রিনের দাবি, গত ২৭ জুলাই মুক্তির পর প্রথম সাত দিনে এক কোটি মিনিটের বেশি স্ট্রিমিং হয়েছে সিরিজটি।
ক্যারিয়ারজুড়েই নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন। এর মধ্যে রোমান্টিক চরিত্রই বেশি। রোমান্টিক ভাবমূর্তি ভুলিয়ে মেহজাবীনকে ভিন্ন রূপে হাজির করলেন ভিকি জাহেদ। মেহজাবীনের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে ভিকি বলেন, ‘রেহনুমা খুব চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। এটা করার পরই মনে হয়েছে, উনি (মেহজাবীন) নিজের চরিত্র নিয়ে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন। উনিও আমার মতো অচেনা, অজানা, কম পরিচিত নানা বিষয়ে আগ্রহী। যে কারণে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়। আমি যেসব চরিত্র ভাবি, সেগুলো একটু অন্য রকম হয়; উনিও খুব পছন্দ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে নিয়ে বেশি কাজ করার কারণ হলো, তিনি খুব নিবেদিতপ্রাণ হয়ে চরিত্রগুলো ধারণ করেন, সময় দেন, পড়াশোনা করেন। ভালো-খারাপ তো পরের বিষয়, এই চেষ্টা পরিচালক হিসেবে আমার জন্য অনেক ইতিবাচক। অন্য রকম কোনো চরিত্র ভাবলে তাই ওনার নামই প্রথম আসে।’
মেহজাবীনের কথায়ও ভিকি জাহেদের কথার প্রতিফলন পাওয়া গেল। গত সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিকি ভাই থ্রিলার বানাতে পছন্দ করেন, এটা আমারও খুব পছন্দের জনরা। ওনার গল্পভাবনা অন্য রকম, অভিনয়শিল্পীদেরও ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। সব মিলিয়ে আমার সঙ্গে অনেক ভাবনাই মিলে যায়।’ আমি কী তুমি প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সিরিজের গল্প শোনার পরই খুব ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল—শুধু থ্রিলার নয়, রোমান্স, ফ্যামিলি ড্রামা, সাই ফাই সবই ছিল। মনে হয়েছিল, এটা সব ধরনের দর্শকই খুব পছন্দ করবেন।’
থ্রিলারে নিজের মুনশিয়ানার প্রমাণ আগেও দিয়েছেন ভিকি জাহেদ। তবে ‘আমি কী তুমি’ সায়েন্স ফিকশন ড্রামা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছুটা অচলিত সাই-ফাই জনরা বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন তিনি, ‘আমার জন্য সেফ জনরা ছিল থ্রিলার। সায়েন্স ফিকশন মানুষ দেখবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তো ছিলই, সব অর্থেই এটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কিন্তু এই গল্পের মূল দর্শনে আমি খুব বিশ্বাস করি; আমার যা আছে, তা নিয়েই খুশি থাকা উচিত। তাই গল্পটা বলতে চাচ্ছিলাম।’
ভিকি জাহেদের কাজকে এককথায় বর্ণনা করতে গেলে একটা শব্দই যথেষ্ট; ডার্ক। থ্রিলারের মোড়কে তাঁর গল্পে দেখা যায় ক্রমিক খুনি, নরমাংসখাদক, জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি। এ ছাড়া তাঁর কাজে থাকে দুনিয়ার নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার রেফারেন্স।
এ ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করার চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে গত সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে ভিকি বলেন, ‘শুরুর দিকে বেশির ভাগ মানুষই এ ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। প্রযোজক পেতেও সমস্যা হতো। তবে আমার বিশ্বাস ছিল। এখন সব দেশের সব ধরনের কনটেন্ট দর্শকের হাতের নাগালে; ওদের সঙ্গে টক্কর দিতে গেলে আমাদেরও বৈচিত্র্য আনতে হবে। যেসব গল্প কখনো বলা হয়নি, সেগুলো বলতে হবে। কারণ, দর্শক তো কনটেন্ট দেখবেন, আপনার বাজেট কম ছিল কি না, কতটা প্রতিকূলতা নিয়ে বানিয়েছেন, সেটা ভাববেন না। তাই টক্কর দিতে আমাদের একটাই অস্ত্র—গল্প।’
‘আমি কী তুমি’র মূল উপজীব্য প্যারালাল ইউনিভার্স। সিরিজে দেখানো আরেকটি ইউনিভার্স সিগমা বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হয়েছে।
পরিচালক জানান, ছোটবেলা থেকেই প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে তাঁর তুমুল কৌতূহল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকার সময় রকিব হাসানের বইতে প্রথম জেনেছিলেন চেনা দুনিয়ার বাইরে অন্য দুনিয়ার কথা। এর পর থেকে নিয়মিতই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করেন। শেষ পর্যন্ত ধারণাটি হাজির করেন নিজের কাজে। তবে কতটা সফলভাবে করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় ছিল। ‘এই বাজেটে সায়েন্স ফিকশন করা কঠিন। তুষারপাত দেখিয়েছি, ক্রিস্টাল বল বৃষ্টি দেখিয়েছি—এসব আমাদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল,’ বলেন ভিকি। আমি কী তুমির শেষে সিকুয়েলের ইঙ্গিত আছে। তবে ভিকি জানান, প্যারালাল ইউনিভার্স যে অনেকগুলো থাকতে পারে, সেটা বোঝাতেই শেষের চমকটি রাখা হয়েছে। সিকুয়েলের ভাবনা থেকে নয়।