ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন বণ্টন এবং নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিতসহ ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন এ দল আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক মহাসমাবেশে এসব দাবি তোলে।
দলের আমির সৈয়দ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ভবিষ্যৎ স্বৈরতন্ত্র রোধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে ইসলামী আন্দোলন বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কার কমিশনে মতামত দিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে আজকের সমাবেশ থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
ঘোষণাপত্রে উত্থাপিত ১৬ দফা দাবিগুলো হলো:
১. সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে, যা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
২. সংসদের প্রস্তাবিত দুই কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করতে হবে।
৪. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন নির্বাচিত স্বৈরাচার বা লুটেরা চক্রের হাতে না যায়, সে জন্য মৌলিক রাষ্ট্রসংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
৫. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে জনপ্রশাসন ঢেলে সাজাতে হবে এবং ফ্যাসিবাদী প্রভাব দ্রুত সরাতে হবে।
৬. বিদেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
৭. পাচার হওয়া রাষ্ট্রীয় অর্থ ফিরিয়ে আনতে দৃশ্যমান, কার্যকর এবং সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও খুন-খারাবি বন্ধে প্রশাসনকে আরও দক্ষ ও কঠোর হতে হবে।
৯. ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং যেসব চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী তা বাতিল করতে হবে।
১০. জাতীয় নির্বাচনের আগে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এবং ভবিষ্যতে স্থানীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার বিধান প্রণয়ন করতে হবে।
১১. দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১২. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
১৩. ঘুষ, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। নিরপরাধ কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো যাবে না এবং মব সৃষ্টিকারীদের কঠোর আইনি শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
১৪. দেশ ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
১৫. নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ও ইসলামী শক্তির দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
১৬. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, জনগণের জানমাল ও সম্মান রক্ষায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সর্বস্তরে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।
মহাসমাবেশে নেতারা দাবি করেন, এসব সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে দেশের জনগণের প্রতি জুলুম-অবিচার চলতেই থাকবে, যা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে দেশকে ঠেলে দেবে। তাই সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।