মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে

প্রকাশকালঃ ২৮ আগu ২০২৪ ০১:০৯ অপরাহ্ণ ৬০৯ বার পঠিত
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে

বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর ঋণের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এখন ঋণের সুদহার বাড়ানো শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে ধার দেওয়ার সুদের হার বাড়ানোর পাশাপাশি। ব্যাংকগুলো এখন ঋণের সর্বনিম্ন সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত করতে চাচ্ছে। ইতোমধ্যে সর্বনিম্ন সুদ ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে কয়েকটি ব্যাংক। বাকি ব্যাংকগুলোও পর্যায়ক্রমে তা করবে। তবে রপ্তানি ঋণসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের ঋণ ও প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদহার ব্যাংকগুলো নিজ উদ্যোগে বাড়াবে না। এসব তহবিলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কী নির্দেশনা আসে, এর ভিত্তিতে করা হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের জন্য সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করে সুদের হার বাড়ানোর একটি বার্তা দিয়েছে। গত রোববার আরও একটি বার্তা দিয়েছে তিন ধরনের নীতি সুদহার বাড়িয়ে। ব্যাংকগুলোও সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে এসব বার্তা পেয়ে। আগে কৃষি খাতে ঋণের সুদহার ছিল ৮ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ১০ থেকে ১৩ শতাংশে উঠেছে। কৃষিঋণ সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক দিচ্ছে ৪ থেকে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ সুদে। জনতা ও রূপালী ব্যাংক দিচ্ছে ৪ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে। ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলো পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদসহ অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্য উৎপাদনে ঋণ দিচ্ছে। এ খাতে ঋণের পরিমাণ কম। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকও এ খাতে ঋণ দিচ্ছে ১২ শতাংশ সুদে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিচ্ছে ১০ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে।

 

শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ ছিল। এখন তা বেড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশে উঠেছে। সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক এ খাতে ঋণ দিচ্ছে ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ, জনতা ব্যাংক ১৩ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংক পৌনে ১৩ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংক সাড়ে ১৩ থেকে সাড়ে ১৫, ব্যাংক এশিয়া সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৪, ব্র্যাক ব্যাংক সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৩, ইস্টার্ন ব্যাংক ১২ থেকে ১৪ এবং আইএফআইসি ব্যাংক ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ সুদে শিল্প খাতে ঋণ দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকগুলো শিল্প খাতে বিনিয়োগ করছে সাড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ মুনাফায়। চলতি মূলধনের ঋণের সুদহারও বেড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশে উঠেছে। আগে ছিল ৯ শতাংশ।

 

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক শিল্প খাতে মেয়াদি চলতি মূলধন ঋণ দিচ্ছে সাড়ে ১৩ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশে। তবে ঋণের পরিমাণ কম। রপ্তানি ঋণের সুদহারও বেড়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। আগে এ খাতে সুদহার ছিল ২ থেকে ৪ শতাংশ। এখন বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে নতুন ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। এর বিকল্প হিসাবে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে ঋণের সুদের হার বেড়ে এখন সাড়ে ১১ থেকে ১৪ শতাংশে উঠেছে। তবে কয়েকটি ব্যাংক সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে বিশেষ তহবিলের আওতায়।

 

ঋণের সুদহারের এ চিত্র জুলাইয়ের। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন ধরনের নীতি সুদহার দশমিক ৫০ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করার খরচ বাড়বে। এতে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার আরও বাড়াতে বাধ্য হবে। ফলে আগামী মাস থেকে সুদের হার আরও একদফা বাড়াবে ব্যাংকগুলো। এদিকে নীতি সুদের হার বাড়ানোর ফলে কলমানির সুদহারসহ এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের ধার করার সুদহারও বাড়বে। এতেও ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে সুদের হারও বাড়বে।

 

তবে যেসব ব্যাংকের আমানত পরিস্থিতি ভালো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে না, বরং ধার দিয়ে থাকে, তাদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদের হার বাড়ানোয় তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে সব ব্যাংকই বাড়তি আমানত সংগ্রহ করতে সুদের হার বাড়াবে। তখন ভালো ব্যাংকগুলোকেও আমানতের সুদহার বাড়াতে হবে। আমানতের সুদহার বাড়ানো হলে ঋণের সুদহারও বাড়াতে হবে। সূত্র জানায়, জুনের তুলনায় জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৭২ থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে। নতুন করে সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যবসায় খরচ বেড়ে যাবে। এর প্রভাবে বাড়বে পণ্যমূল্যও, যা ভোক্তার ওপর চাপ তৈরি করবে।