প্রকাশকালঃ
০৭ আগu ২০২৩ ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ ১৮৭ বার পঠিত
*সাড়ে ৩ হাজার নেতাকে গণভবনে ডেকেছেন, আজ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা
*স্থানীয় এক শ্রেণির নেতা ও এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে হাজির হওয়ার প্রস্তুতি তৃণমূল নেতাদের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশের নেতাদের ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রবিবার গণভবনে তাদের নিয়ে বসবেন তিনি। সবার কথা শুনবেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা ও আগামী নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোট প্রস্তুতির চূড়ান্ত বার্তা দেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সারা দেশের নেতাকর্মীদের নির্বাচনি গাইডলাইন, দলের পদবঞ্চিত-ত্যাগী অভিমানীদের রাগ নিবারণ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সারা দেশে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকারও নির্দেশনা দেবেন তিনি। সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতা, সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধি আজ গণভবনে উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির বিশেষ বর্ধিত সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষ বর্ধিত সভা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী, গণভবনে অনুষ্ঠেয় বিশেষ বর্ধিত সভায় আমন্ত্রিত নেতাদের বিজয়সরণি দিয়ে জাতীয় সংসদের লেক রোড হয়ে ১ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন। প্রসঙ্গত, প্রথমে ৩০ জুলাই বর্ধিত সভার তারিখ নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু পরে তারি
খ পরিবর্তন করে ৬ আগস্ট বিশেষ বর্ধিত সভার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের এ ধরনের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় ছয় বছর আগে ২০১৭ সালের ২৩ জুন। তখনও সামনে ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঐ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল ব্যক্তি নয়, নৌকা প্রতীক দেখে ভোট দিতে হবে। এবারও বর্ধিত সভা থেকে ‘ভোট কৌশলে’র বার্তা নিয়ে ঘরে ফিরবেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা।
জানা গেছে, যে সব নেতাকর্মী অভিমান করে দলের সাংগঠনিক কাজ থেকে দূরে সরে আছেন, তাদেরও রাগ ভাঙাতে কাজ করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা। জেলায়-জেলায় সাংগঠনিক ত্রুটি কাটিয়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী কাঠামোয় দাঁড় করাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক নেতারা। অভিমানীদের রাজনীতির মাঠে ফেরাতে দফায়-দফায় জেলা ও উপজেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তারা। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব বাদ দিয়ে দেশ-জাতি ও দলের স্বার্থে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। অতীতের সব দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে আওয়ামী পরিবারে সন্তান হিসেবে, এক সঙ্গে কাজ করতে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে পদবঞ্চিত-ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার আশ্বাসও দিচ্ছেন নেতারা। ভোটের আগে দলকে সুসংগঠিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। এজন্য আজ বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতা ও সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিবেন তিনি। দলীয় ঐক্য সুসংহত করে সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার তাগিদও
থাকছে আওয়ামী লীগের এই বিশেষ বর্ধিত সভায়।
আওয়ামী লীগের সাত জন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের বিশেষ এই বর্ধিত সভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি ছাড়াও দলীয় ঐক্য সুসংহত ও সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয় থাকবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অর্জন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। জানা গেছে, দলীয় নেতা, সংসদ সদস্য এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রকাশনা। দেওয়া হবে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে তৈরি প্রামাণ্য চিত্রের সিডি। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মূলত সাত ইস্যু নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের গাইডলাইন দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন, বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব, সরকারের উন্নয়ন প্রচার, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তৃণমূল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী হতে উদ্বুদ্ধ করা, কারো উসকানিতে পড়ে গায়ে পড়ে বিবাদে না জড়ানো, সর্বোপরি
ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকাকে অথবা জোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করা।
তৃণমূলের একাধিক নেতারা জানান, বিশেষ বর্ধিত সভায় আমরাও (তৃণমূলের) দাবি তুলে ধরব। আমাদের দাবি সংবিধান মেনে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। বিকল্প কোনো প্রস্তাব বা পন্থা তৃণমূল আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না। একই সঙ্গে বিশেষ বর্ধিত সভায় স্থানীয় এক শ্রেণির নেতা ও এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে হাজির হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন সারা দেশের তৃণমূলের নেতারা। তৃণমূলে কোন্দল ও দ্বিধাবিভক্তির নেপথ্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বড় প্ল্যাটফরমের এই সভায় কথা বলবেন তারা। তৃণমূল নেতাদের মতে, কেন্দ্রের অনেক নেতা নিজ নিজ এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশী। ফলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারাও এলাকায় কোন্দল সৃষ্টি করছেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া নেতারাও কোন্দল সৃষ্টিতে জড়িয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠানেও দ্বিধাবিভক্ত থেকে কর্মসূচি পালন করা হয়। নির্বাচনে সামনে রেখে দলের এমন চিত্র দলের জন্য নেতিবাচক বার্তা বহন করে।