দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরির সুযোগ, বেতন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা

প্রকাশকালঃ ০১ জুন ২০২৪ ০৪:২১ অপরাহ্ণ ৬৯৬ বার পঠিত
দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরির সুযোগ, বেতন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা

সরকারিভাবে প্রতিবছর দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠান ও কাজভেদে মূল বেতন বাংলাদেশি টাকায় ন্যূনতম এক লাখ ৭০ হাজার টাকা, ওভারটাইম মিলে হবে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া, নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন সাজিদ মাহমুদ

 

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলের মাধ্যমে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছে মোট ৩১ হাজার ৫০ জন কর্মী। ২০২২-২৩ সালে এক বছরে দেশটিতে কাজের সুযোগ পেয়েছেন ছয় হাজার ৭৪৯ জন বাংলাদেশি। প্রতিবছর ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার মাধ্যমে ৭০ শতাংশ ও লটারির মাধ্যমে ৩০ শতাংশ কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পান।


   
যেসব খাতে কাজের সুযোগ: বোয়েসেলের প্রধান ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন, মানবসম্পদ ও অর্থ) নূর আহমেদ জানান, এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) আওতায় ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে। সাধারণত অটোমোবাইল, টেক্সটাইল, কৃষিজাত খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে সাধারণ ও ‘কমিটেড/স্পেশাল সিবিটি (কম্পিউটার বেজড টেস্ট)’—এই দুই ধরনের কর্মী নেওয়া হয় দেশটিতে।

 
সুযোগ যাদের:
ক. শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে ন্যূনতম এসএসসি বা সমমান অথবা ভোকেশনাল বা ডিপ্লোমা ডিগ্রি।
খ. বয়স ১৮ থেকে ৩৯ বছর।
গ. কোরিয়ান ভাষা বোঝা, লেখা ও বলায় পারদর্শী।

ঘ. কালার ব্লাইন্ড বা রং বোঝার দুর্বলতা নেই।
ঙ. যারা এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় ই৯ বা ই১০ ভিসায় গিয়ে সব মিলে পাঁচ বছরের বেশি থাকেনি বা অবৈধভাবে অবস্থান করেনি।
চ. বৈধ ও হালনাগাদ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আছে যাদের।
ছ. ফৌজদারি অপরাধে কখনো জেল-জরিমানা বা শাস্তি হয়নি, এমন প্রার্থী।

 

শিখতে হবে কোরিয়ান ভাষা

বিকেটিটিসি মিরপুর ও আইএমটি মুন্সিগঞ্জের প্রাক্তন প্রশিক্ষক এবং বোয়েসেলের প্রি-ডিপার্চার ট্রেইনার ফারুক আহমেদ জানান, দক্ষিণ কোরিয়া কাজে যাওয়ার জন্য প্রথমেই শিখতে হবে কোরিয়ান ভাষা। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট (এইচআরডি) কর্তৃপক্ষ মূলত কোরিয়ান ভাষায়ই যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষা নেয়। ভাষা যাচাই পরীক্ষায় কোরিয়ান ভাষা বলা, লেখা ও বোঝার দক্ষতা দেখা হয়। দেশের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) থেকে কোরিয়ান ভাষার সার্টিফিকেট কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে বেসরকারি অনেক প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মাধ্যমেও কোরিয়ান ভাষা শেখা যাবে।


 

নিবন্ধন

দক্ষিণ কোরিয়ার মানবসম্পদ উন্নয়ন (এইচআরডি) কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুসারে বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ ইপিএসের আওতায় প্রতিবছর নিবন্ধনের সময়সীমা উল্লেখ করে জাতীয় দৈনিক ও বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০০ টাকা নিবন্ধন ফি পরিশোধ করে পেমেন্টের ট্রানজেকশন আইডি নিতে হবে। এরপর নির্ধারিত ফরমে পাসপোর্ট কপি, যথাযথ তথ্য, পেমেন্টের ট্রানজেকশন আইডি উল্লেখ করে বোয়েসেলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর কনফার্মেশন ফরমটি প্রিন্ট করে সংগ্রহে রাখতে হবে।

 

প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া

প্রাথমিক নিবন্ধিত প্রার্থীদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। লটারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত নিবন্ধনের তারিখ ও সময় বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে (https://boesl.gov.bd) প্রকাশ করা হবে। এই ধাপে বোয়েসেলের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তিন হাজার ২০০ টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে। চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষার তারিখ, সময় ও স্থান জানাবে বোয়েসেল। ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরে কম্পিটেন্সি টেস্ট (যোগ্যতা যাচাই) এবং স্কিল টেস্ট (দক্ষতা যাচাই) নেওয়া হবে।

এসব পরীক্ষা নেবেন দক্ষিণ কোরিয়ার এইচআরডি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা। পরের ধাপে উত্তীর্ণদের নিজ নিজ এলাকার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ ও বোয়েসেলের নির্ধারিত আবেদন ফরমসহ পাসপোর্ট কপি বোয়েসেল অফিসে জমা দিতে হবে। এরপর বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ প্রার্থীদের সব তথ্য দক্ষিণ কোরিয়ার এইচআরডি কর্তৃপক্ষের সার্ভারে সংরক্ষণ করবে। সেই তথ্য দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ যাচাই করে চূড়ান্তভাবে প্রার্থী তালিকা রোস্টার তৈরি করবে। প্রার্থীদের এই রোস্টারের মেয়াদ দুই বছর [প্রথম ধাপে এক বছর এবং দ্বিতীয় ধাপে এক বছর]। এই সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে দক্ষিণ কোরিয়ায় নেওয়া হবে নির্বাচিত কর্মীদের। রোস্টারভুক্তদের লেবার কন্ট্রাক্টের আওতায় কাজের ভিসা দেবে দেশটি।


প্রশিক্ষণ, ভেরিফিকেশন ও যাবতীয় ফি

রোস্টারভুক্ত ও লেবার কন্ট্রাক্ট প্রাপ্তির পর প্রার্থীদের বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (বিকেটিটিসি) ৮৪ ঘণ্টার প্রিলিমিনারি প্রশিক্ষণ, যক্ষ্মা পরীক্ষা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। এরপর বোয়েসেল অফিসে মূল পাসপোর্ট, প্রশিক্ষণ সনদ, ভিসা ফরম, নির্ধারিত ই৯/ই১০/এইচ২ স্ট্যাটাস ফরম, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং ভিসাসংক্রান্ত সব ডকুমেন্টস এবং বোয়েসেলের সার্ভিস চার্জ, ডাটাবেইস ফি, ভিসা ফি, বহির্গমন ফি, স্মার্ট কার্ড ফি, উৎস আয়কর এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলসহ মোট ৩৪ হাজার ২৭৯ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়াগামী সাধারণ কর্মীদের ফেরতযোগ্য এক লাখ টাকা পে-অর্ডার এবং কমিটেড বা স্পেশাল সিবিটি (কম্পিউটার বেজড টেস্ট) কর্মীদের ফেরতযোগ্য তিন লাখ টাকা পে-অর্ডার বোয়েসেলে জামানত রাখতে হবে।

 

ভিসা প্রাপ্তির পর করণীয়

নূর আহমেদ জানান, ভিসা পাওয়ার পর ফ্লাইটের তারিখ নিশ্চিত, টিকিটের টাকা জমা ও কোরিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর তিন দিনের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াসহ আরো কিছু ধাপ রয়েছে। আট ঘণ্টাব্যাপী আচরণ পরিবর্তন ও প্রেরণামূলক প্রশিক্ষণ শেষে কর্মীদের পাসপোর্ট ও টিকিট সরবরাহ করবে বোয়েসেল। দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছার পর দেশটির নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দর থেকে কর্মীদের গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য যাচাই কেন্দ্রে নিয়ে যাবে। এরপর তারা নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দেবে। সেখানে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর প্রাথমিকভাবে তিন বছর, এরপর আরো এক বছর ১০ মাসসহ মোট চার বছর ১০ মাস কাজের সুযোগ পাবেন কর্মীরা। এই বৈধ সময়কালে চাকরি শেষ করে দেশে ফেরত আসা কর্মীরা ভবিষ্যতে কমিটেড বা স্পেশাল সিবিটি কর্মী হিসেবে পুনরায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের ভিসায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন।