ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৮ মিনিটের বাসযাত্রার জন্য অপেক্ষা আধা ঘণ্টার
প্রকাশকালঃ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৯ অপরাহ্ণ ২৩৮ বার পঠিত
বিমানবন্দরের কাওলায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পে যখন গাড়ি এসে পৌঁছায়, তখন সকাল ১০টা ২৮ মিনিট। আর যখন ফার্মগেট এসে নামি তখন সকাল ১০টা ৪৭ মিনিট। কাওলা থেকে ফার্মগেট—১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পথ দোতলা বাসে আসতে সময় লেগেছে মাত্র ১৮ মিনিট। নিঃসন্দেহে উত্তরা বা বিমানবন্দর এলাকা মানুষের জন্য স্বপ্নের যাত্রা।
কিন্তু এ পথে আসার জন্য একজন যাত্রী হিসেবে আমাকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী গণমাধ্যমের সুবাদে জানতে পারি, উত্তরার জসিমউদ্দীন থেকে এক্সপ্রেসওয়ের বাস ছাড়বে। সুতরাং ১৩ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে প্রথমে রিকশায় চড়ে জসিমউদ্দীনে নামলাম। ব্যস্ত রাস্তা কোনোমতে পার হলাম।
তার আগে জসিমউদ্দীনের ওভারপাসের নিচে একজন ট্রাফিক পুলিশের কাছে জানতে চাইলাম, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী বাস কোথা থেকে ছাড়ে। তিনি বললেন, ‘রাস্তা পার হয়ে যান, ওই পাশ থেকে ছাড়ে।’
ট্রাফিক পুলিশের কথামতে, রাস্তা পার হয়ে কাউন্টার খুঁজতে থাকলাম। এর মধ্যে এক ভদ্রলোক আমার কাছে বিআরটিসির কাউন্টার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমিও তাঁর মতো খুঁজছি জানার পর তিনি আমার সঙ্গী হলেন। পাশের এক দোকানির কাছে কাউন্টার সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘না’ সূচক জবাব দিলেন। বুঝতে পারছিলাম না, কার কাছে জানতে চাইব। শেষে এক রিকশাচালকের কাছে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘সামনে যান।’ তাঁর কথা ধরে সামনে এগোলাম। কিন্তু কাউন্টার বা যাত্রীদের দেখা নেই।
আবার রাস্তার দাঁড়ালাম। এবার একজন ট্রাফিক পুলিশকে আসতে দেখলাম। তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি এবার নির্দিষ্ট করে বললেন, র্যাব-১-এর আগে যেখানে ওভারপাস নামছে, সেখানে কাউন্টার। বুঝলাম, আসলে জসিমউদ্দীন নয়, কাউন্টার দেওয়া হয়েছে আরও বেশ খানিকটা দূরে। ট্রাফিক পুলিশের তথ্যমতে বেশ খানিকটা সামনে হেঁটে কাউন্টার পেলাম। বেশ কিছু যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথমেই একটা টিকিট নিলাম। টিকিট বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলাম, কখন গাড়ি আসবে। জানালেন, ১৫-২০ মিনিট পর।
পাশ থেকে এক যাত্রী বললেন, ‘ও ভাই, আমাকেও বললেন ১৫-২০ মিনিট লাগবে। আমি তো আসলাম প্রায় ১০ মিনিট হলো।’ টিকিট বিক্রেতা বললেন, ‘ভাই, গাড়ি কম। রাস্তায় যানজট। আমার কী করার আছে।’ সত্যিই তো, কাউন্টারের লোকটি কী করবে।
আমি যখন টিকিট নিই, তখন সকাল ৯টা ৫০ মিনিট। পাশের এক যাত্রী বললেন, গতকালও তিনি এক্সপ্রেসওয়ের দোতলা বাসে চড়েছেন। আজও এলেন। খেজুরবাগানে কালও গাড়ির জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। পরে গাড়ি এলেও যাত্রী কম থাকায় গাড়ি ছাড়ে না।
আবার গাড়ি ছাড়ার পর বিজয় সরণির সিগন্যাল পেরিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে অনেক সময় অপেক্ষা করা লেগেছে। সব মিলিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে অল্প সময়ে গন্তব্য পৌঁছানোর আগে যে হয়রানি পোহাতে হয়, তাতে ‘যেই কপাল সেই মাথা’ অবস্থা। ঘুরেফিরে নিচ দিয়ে যানজট ডিঙিয়ে যেতে যে সময় লাগছে, এখানেও সেই সময় লেগে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে ১০টা ১০ মিনিটে গাড়ি আসে। ৩৫-৪০ যাত্রী হুড়মুড়িয়ে গাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে বাস বিমানবন্দর পদচারী-সেতুর নিচে এসে দাঁড়াল। সেখানে যা যাত্রী উঠল, তাতে বাস ভরে গেল। এরপর যাত্রী নিয়ে বাস যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন কাওলা পর্যন্ত অনেক যাত্রী ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বাসকর্মীরা তাঁদের নিচ্ছিলেন না। তাঁরা জানতে চাচ্ছিলেন, কাউন্টার কোথায়। কে শোনে, কার কথা। গাড়ি এগিয়ে যায় এক্সপ্রেসওয়ের দিকে।
টোল প্লাজায় টোল আদায় করতে মিনিটখানক সময় লাগে। সেখান থেকে দোতলা বাস একটানা চালিয়ে চলে আসে ফার্মগেট। মাত্র ১৮ মিনিট। এর মধ্যে বাসে পাশের যাত্রী বললেন, এই পথে উত্তরা এলাকার সবচেয়ে বেশি মানুষ চলাচল করবে। বাস চালু করা উচিত ছিল আবদুল্লাহপুর বা হাউস বিল্ডিং থেকে। তাহলে যাত্রীদের হয়রানি কম হতো। গাড়িও যাত্রী পেত প্রচুর। তাঁর কথার যুক্তি আছে। আমি নিজেও আমার বাসার কাছে আজমপুর থেকে উঠতে পারতাম। জসিমউদ্দীন থেকে অত দূর হেঁটে কাউন্টার খুঁজে বের করতে হতো না।
ওই যাত্রী আবার বললেন, ফার্মগেট থেকে বাস ছাড়লে কী সমস্যা হতো। কারণ, এই পথের ৯০ শতাংশ যাত্রী ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ বা মতিঝিলে যাতায়াত করে থাকেন। একজন যাত্রীকে এক্সপ্রেসওয়ের বাস ধরতে হলে এখন খেজুরবাগানে যেতে হবে। আমি বললাম, ফার্মগেটে তো গাড়ি রাখার জায়গা নেই। ওই যাত্রী বললেন, অন্য বাস কোম্পানির গাড়ি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। এই পাবলিক বাস কেন সেখানে রাখা যাবে না?
খাঁটি কথা। আমি ভাবি, আমাকেও এ বাসে বাসায় ফিরতে হলে কারওয়ান বাজার থেকে হেঁটে বা যানবাহনে খেজুরবাগানে আসতে হবে। তারপর সেখান থেকে বাস ধরতে হবে। হয়রানি তো এখানেও কম নয়।
এরই মধ্যে দোতলা বাস চলে এল ফার্মগেট। তেজগাঁও কলেজ থেকে আরেকটু সামনে এগিয়ে রাস্তার পাশে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হলো। তখন সকাল ১০টা ৪৬ মিনিট। নেমেই সব যাত্রী ফার্মগেটের দিকে ছুটছেন।
আমিও তাঁদের সঙ্গে শরিক হই। সেখান থেকে কারওয়ান বাজার অফিসে যখন পৌঁছাই, তখন বেলা ১১টা। ভাবলাম, জসিমউদ্দীন থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে তো সেই ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটই লেগে গেল।