প্রকাশকালঃ
৩১ জুলাই ২০২৩ ০২:০৬ অপরাহ্ণ ১৮২ বার পঠিত
সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। অনুষ্ঠান বানিয়ে জমা দিয়েছিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। প্রচারের সময়সূচিও জানানো হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার রাতে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ প্রচারিত হয়নি। বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে জানানো হয়েছে, অনিবার্য কারণবশত নির্ধারিত সময়ে ‘ইত্যাদি’ প্রচার করা যায়নি। এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে তারা। তাহলে আজকের ইত্যাদি কবে প্রচারিত হবে? শুক্রবার রাতে এ তথ্য জানতে চেয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে বেশ কিছু পাঠক যোগাযোগ করেছেন।
‘ইত্যাদি’র নির্মাতা, সঞ্চালক হানিফ সংকেতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানালেন নতুন সূচি। তিনি শুক্রবার রাত ১০টা ১১ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন।
হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘অনিবার্য কারণে আজ রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর প্রচার–নির্ধারিত ইত্যাদির মুন্সিগঞ্জ পর্বটি প্রচার করা হয়নি। আমরা জানি, মুন্সিগঞ্জের দর্শকদের মতো দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শক ইত্যাদি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন। কারণ, এই প্রচার–সময়টি টেলিভিশনে প্রচারিত প্রোমো, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনসহ আমাদের বিভিন্ন ফ্যান পেজ থেকেও উল্লেখ করা হয়েছিল। আপনারা নির্দিষ্ট সময়ে ইত্যাদি দেখতে না পারায় আমরাও আন্তরিকভাবে দুঃখিত। যেহেতু ইত্যাদি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়, তাই প্রচারের সময়সূচি পরিবর্তনের ব্যাপারে ফাগুন অডিও ভিশনের কিছুই করার থাকে না। কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে আগামীকাল শনিবার রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর।’
জানা গেছে, এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে প্রত্ননগরী মুন্সিগঞ্জে। ফাগুন অডিও ভিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশকে জানতে ও জানাতে প্রতিনিয়ত ‘ইত্যাদি’ যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইছামতী নদীবিধৌত মুন্সিগঞ্জে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে ইছামতী নদীর তীরে, ঐতিহ্যবাহী প্রত্মনিদর্শন ইদ্রাকপুর কেল্লার সামনের পুকুরের মাঝখানে। কেল্লার আদলে তৈরি করা হয়েছে ভাসমান মঞ্চ।
ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে মুন্সিগঞ্জে ছিল উৎসবের আমেজ। কেল্লার সামনের পুরো চত্বর ও পুকুরের চারপাশ ছিল দর্শকপূর্ণ। তবে কেল্লার চত্বরে স্থানীয়ভাবে অনেক দর্শকই ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। তাই কেল্লার সামনে রাস্তায় এবং চারদিকের বাড়িঘরের ছাদেও ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। অনুষ্ঠান ধারণ চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এবারের অনুষ্ঠানে মুন্সিগঞ্জের সন্তান জনপ্রিয় শিল্পী তাহসান পরিবেশন করেছেন একটি নতুন গান।
গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন সাজিদ সরকার। আবদুল আলীমের গাওয়া একটি গান নতুন সংগীতায়োজনে গেয়েছেন সৈকত জাহিদ, বাদশা ও শাহজাহান। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন আকাশ মাহমুদ। রয়েছে মুন্সিগঞ্জ জেলাকে নিয়ে একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর নাচ। পদ্মার পাড়ে ধারণ করা গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল এবং সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি, কণ্ঠ দিয়েছেন পুলক ও তানজিনা রুমা। নৃত্য পরিচালনা করেছেন মনিরুল ইসলাম।
দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান মুন্সিগঞ্জকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে চারজন দর্শক নির্বাচন করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন আগের প্রজন্মের শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ও বর্তমান প্রজন্মের শিল্পী বালাম, যাঁদের বাড়িও এই অঞ্চলে। নির্বাচিত দর্শক ও আমন্ত্রিত শিল্পীদ্বয় গেয়েছেন ফেরদৌস ওয়াহিদের একটি জনপ্রিয় গানসহ তাঁর প্রয়াত চার বন্ধু আজম খান, ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর ও পিলু মমতাজের জনপ্রিয় গানের অংশবিশেষ।
এবারের অনুষ্ঠানে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সবার সচেতনতা বাড়াতে একটি ছোট্ট নাটিকার মঞ্চায়ন রয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন মীর সাব্বির, শাহেদ আলী ও শামীম আহমেদ। ইত্যাদি বরাবরই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি প্রতিবেদন। রয়েছে মুন্সিগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন এবং কীর্তিমান ব্যক্তিদের ওপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। রয়েছে মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া টিনের ঘর নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। তুলে ধরা হয়েছে বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার একটি গ্রামের চার বোনের জীবনচিত্র, যাঁরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
ইত্যাদিতে বিশ্বের বিস্ময়কর বিষয়ের ওপর বিদেশি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। এবার দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ওপর একটি প্রতিবেদন। মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক জাদু প্রদর্শন করেন প্রবাসী জাদুশিল্পী ফারহানুল ইসলাম, যিনি ‘ব্রাউন ম্যাজিক’ নামেই বেশি পরিচিত। কানাডাপ্রবাসী ফারহান পেশায় শিক্ষক। দীর্ঘদিন বিদেশি টেলিভিশনে জাদু প্রদর্শন করলেও দেশের কোনো টেলিভিশনের পর্দায় এই প্রথম জাদু দেখাবেন।
ইত্যাদিতে গাছ উপহার দেওয়ার রীতি অনেক পুরোনো। অনেকেই আগে উপহার দেওয়া গাছের বর্তমান অবস্থা দেখতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। এবারের পর্বে তাই দেখা যাবে দর্শক পর্বে উপহার দেওয়া গাছগুলোর বর্তমান অবস্থা। এ ছাড়া সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে যথারীতি রয়েছে নানি-নাতির কথার মাতামাতি।
নিয়মিত অন্যান্য পর্বসহ রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ণ নাট্যাংশ। টেলিভিশনে ‘বিকৃত উচ্চারণ’ এবং ‘ভাষা ব্যঙ্গ’, ভিউ দিয়ে শিল্পীর মান বিচার, সততার শিক্ষা, অনলাইন যেখানে অফলাইন, তৈল বনাম ভাগ্যগুণ, কৃষকের কথা, অপ্রিয় সত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।
এবারের ইত্যাদিতে অংশ নেওয়া উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন সোলায়মান খোকা, জিয়াউল হাসান, মাসুম বাশার, সুভাশিষ ভৌমিক, জিল্লুর রহমান, শবনম পারভীন, মিলি বাশার, মুকিত জাকারিয়া, তারিক স্বপন, জামিল হোসেন, আবু হেনা রনিসহ আরও অনেকে। বরাবরের মতো এবারও অনুষ্ঠানটির শিল্পনির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসেবে ছিলেন রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন।
অনুষ্ঠানটির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।