মহানবী (সা.)-এর প্রশংসায় কোরআনে যা বলা হয়েছে

প্রকাশকালঃ ১০ আগu ২০২৩ ০২:১৫ অপরাহ্ণ ৩০১ বার পঠিত
মহানবী (সা.)-এর প্রশংসায় কোরআনে যা বলা হয়েছে

হান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুন্দর পৃথিবী গড়ে তাতে সুন্দর ও প্রিয় সৃষ্টি মানুষ পাঠিয়েছেন। এই মানবজাতির মধ্য হতেই আল্লাহপাক মানুষকে সৎপথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে প্রত্যেক জাতির কাছে দিকনির্দেশনায় অতি উত্তম ও সুন্দর চরিত্রের মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন অসংখ্য নবী ও রাসুল। তাঁদের মধ্যে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, তিনিই হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। 

যাঁর প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা তাঁর নাম রেখেছেন আহমাদ ও মুহাম্মদ (সা.)। আহমাদ হলো সর্বাধিক প্রশংসাকারী এবং মুহাম্মদ হলো প্রশংসিত। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী ও রাসুল (সা.)-এর প্রশংসায় পবিত্র কোরআনকে মহা উজ্জ্বল করেছেন এবং তিনিও [মুহাম্মদ (সা.)] তাঁর প্রেমিক মহান আল্লাহর প্রশংসা করে, জগদ্বাসীকে তাঁর (আল্লাহর) পথে আহবান করে মানব-মুক্তির সুসংবাদ দিয়ে শাস্তির ভয়ও প্রদর্শন করেছেন। 

ফলে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়তম বন্ধু, মানবজাতির মুক্তির দিশারি, আল্লাহর পথে আহবানকারীরূপে ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদ দানকারী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসা পবিত্র কোরআনে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছেন।


একবার কিছু লোক উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর কাছে গিয়ে রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু বলার জন্য আরজ করলেন, ‘হে উম্মুল মুমিনিন, আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র সম্বন্ধে বলুন। তিনি বলেন, তুমি কি কোরআন পড়ো না? গোটা কোরআনই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৪২)

তাই আমি মহানবী (সা.)-এর প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা আল কোরআনে যেসব আয়াত বর্ণনা করেছেন, তা এখানে তুলে ধরতে কিছুটা চেষ্টা করলাম। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন— ‘নিশ্চয়ই আপনি এক মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কালাম, আয়াত : ৪)

‘হে মুহাম্মদ, আমি তোমাকে গোটা জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

‘আমি তো তোমাকে গোটা মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা উপলব্ধি করে না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮)


অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র হয়েছিলে; যদি তুমি কঠোরচিত্ত হতে তাহলে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা চাও এবং কাজেকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো এবং তুমি কোনো সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্ভরশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রশংসায় মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদাতা ও সর্তককারীরূপে এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর দিকে আহবানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।


তুমি বিশ্ববাসীদের সুসংবাদ দাও যে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মহা অনুগ্রহ আছে। এবং তুমি অবিশ্বাসী ও কপটাচারীদের কথা শুনো না; ওদের নির্যাতন উপেক্ষা করো এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করো; কর্মবিধায়করূপে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪৫-৪৭)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুহাম্মদ, ঘোষণা করে দাও, ওহে মানবজাতি, আমি তোমাদের সবার প্রতি মহান আল্লাহর রাসুল।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৮)

ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) যিনি তাঁর রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, অন্য সব ধর্মের ওপর একে (ইসলাম ধর্মকে) জয়যুক্ত করার জন্য।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত : ২৮)।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, লোকদের বলে দাও, তোমরা যদি প্রকৃতই আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)


মহানবী (সা.)-এর আহমদ ও মুহাম্মদ নামের মধ্যেই তাঁর জীবনের সর্বোত্তম আদর্শ ও গুণাবলি বিদ্যমান। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেমন আমি তোমাদের প্রতি তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল পাঠিয়েছি, যে তোমাদের আমার আয়াত পড়ে শোনায় এবং তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে ও উৎকর্ষিত করে, তোমাদের কিতাব (কোরআন) ও হিকমতের শিক্ষা দেয় এবং যেসব কথা তোমাদের অজ্ঞাত, তা তোমাদের জানিয়ে দেয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫১)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে আছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১)

মহানবী (সা.)-এর গুণাবলির বর্ণনা একমাত্র আল্লাহর দ্বারাই শেষ হতে পারে, মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ কেমন ছিলেন, কেমন ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক জীবন তা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে বলা সম্ভব না। তাঁর সম্পর্কে জানতে হলে অধ্যয়ন করতে কোরআন ও হাদিস আর রাসুল (সা.)-এর জীবনের ওপর লেখা সিরাতগ্রন্থসমূহ।

মহান আল্লাহ আমাদেরও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শমতো জীবনযাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন