শরিয়ত নির্দেশিত সীমারেখা মেনে নারীরা রূপচর্চা করবে যেভাবে

প্রকাশকালঃ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৪:৫০ অপরাহ্ণ ৫৪১ বার পঠিত
শরিয়ত নির্দেশিত সীমারেখা মেনে নারীরা রূপচর্চা করবে যেভাবে

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু রূপচর্চার বিষয়টি নারীদের সঙ্গে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। এটি তাদের স্বভাবজাত একটি বিষয়। ইসলাম তাদের এই মানসিকতাকে মূল্যায়ন করে বেশ কিছু মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। শরিয়ত নির্দেশিত সীমারেখা মেনে নারীদের রূপচর্চা করা উচিত। 


রূপচর্চার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

নারীদের রূপচর্চার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো স্বামীর সন্তুষ্টি। স্বামীকে খুশি করার জন্য এটা তাদের এক প্রকার ইবাদত। সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর জন্য ধার করে জিনিস নিয়ে সাজসজ্জা করার বর্ণনাও পাওয়া যায়।আয়মান (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.)-এর কাছে আমি হাজির হলাম। তাঁর গায়ে তখন পাঁচ দিরহাম মূল্যের মোটা কাপড়ের কামিজ ছিল।

 

তিনি আমাকে বলেন, আমার এই বাঁদির দিকে চোখ তুলে একটু তাকাও, ঘরের ভেতরে এটা পরতে সে অপছন্দ করে। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জামানায় মদিনায় মেয়েদের মধ্যে আমারই শুধু একটি কামিজ ছিল। মদিনায় কোনো মেয়েকে বিয়ের সাজে সাজাতে গেলেই আমার কাছে কাউকে পাঠিয়ে ওই কামিজটি চেয়ে নিত (সাময়িক ব্যবহারের জন্য)। (বুখারি, হাদিস : ২৪৫২)

 

নারীরা মাহরাম ১৪ শ্রেণির পুরুষ ও নারীসদৃশ হিজড়াদের সামনে স্বাভাবিক অঙ্গের সাজসজ্জা প্রদর্শন করতে পারবে। গায়রে মাহরাম পুরুষদের দেখানোর জন্য রূপচর্চা জায়েজ নয়। এতে রূপচর্চাকারী গুনাহগার হবে। জাহেলি যুগের মতো নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো এবং প্রাচীন জাহেলিয়াতের নারীদের মতো সাজগোজ ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘোরাফেরা কোরো না।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৩)


রূপচর্চার মূলনীতি

রূপচর্চার ক্ষেত্রে নারীদের এই মূলনীতিগুলো প্রযোজ্য। এগুলো মানতে নারীদের এবং তাদের অভিভাবকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

 

এক. যে কাজ ইসলামে অবৈধ সে কাজ কারো জন্যই করা জায়েজ নয়। এমনকি স্বামীকে খুশি করার জন্য করাও জায়েজ নয়। ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য হলো পছন্দ হোক বা অপছন্দ সর্বাস্থায় আমিরের কথা শোনা ও মান্য করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে আল্লাহর নাফরমানির নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তাকে নাফরমানির নির্দেশ দেওয়া হলে তখন আর শোনা ও মান্য করা যাবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭০৭)

 

দুই. রূপচর্চা করতে গিয়ে নারী পুরুষের রূপ ধারণ করতে পারবে না। যে কারণে তাকে পুরুষসদৃশ মনে হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ওই সব পুরুষকে লানত করেছেন, যারা নারীর বেশ ধরে এবং ওই সব নারীকে, যারা পুরুষের বেশ ধরে। (বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৫)

 

তিন. রূপচর্চার ক্ষেত্রে কোনো অমুসলিম কিংবা কথিত নায়িকাদের অনুসরণ করা যাবে না। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের অনুসরণ-অনুকরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯৮৯)

 

চার. রূপচর্চার জন্য নাপাক বা ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ক্ষতি ও ক্ষতি সাধনের কোনো অনুমতি নেই।’ (দারাকুতনি, হাদিস : ৩০৭৯)

 

পাঁচ. আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা যাবে না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া প্লাস্টিক সার্জারি করে শরীর পরিবর্তন করা জায়েজ নেই। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আল্লাহ লানত করেছেন ওই সব নারীর প্রতি, যারা অন্যের শরীরে উল্কি অঙ্কন করে, নিজ শরীরে উল্কি অঙ্কন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু উপড়িয়ে ফেলে এবং দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে। এসব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধন করে। (বুখারি, হাদিস : ৪৫২৫)

এসব বিষয়ে মুসলিম নারীদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।