ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। শুক্রবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাঁর মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায়। তিনি জানান, দীর্ঘ ১৮ বছর বিদেশে অবস্থানের পর তারেক রহমান দেশে ফিরছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে যে আশা-প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা তা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এ সময় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে ফেরার পর তারেক রহমানকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পেয়েছে বিএনপি। তিনি গুলশানের ফিরোজা ও সংলগ্ন আরেকটি বাসায় অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারেক রহমান চাইলে ভ্রমণ পাস দেওয়া হবে।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান তারেক রহমান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
গত নভেম্বরের শেষ দিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সে সময় লন্ডন থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, সংকটকালে মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও বিষয়টি তাঁর একক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল নয়।
নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি
দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, ২৫ ডিসেম্বর বিমানবন্দরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন জানান, নেতাকর্মীরা প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখতে বিমানবন্দরে যাবেন।
রাজনৈতিক জীবন
তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে বগুড়ার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন। ২০০২ সালে তিনি দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হন। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় কারাবন্দি হন এবং পরে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। ২০০৯ ও ২০১৬ সালের বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের সাজা বাতিল ও অব্যাহতি পাওয়ার পর থেকেই তাঁর দেশে ফেরার আলোচনা জোরালো হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া বর্তমানে সিসিইউতে রয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, তিনি সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবার আওতায় আছেন এবং চিকিৎসা কার্যক্রম সন্তোষজনকভাবে চলছে।