কোরআনে বর্ণিত অলৌকিক সিন্দুকে কী ছিল

প্রকাশকালঃ ০৮ মে ২০২৩ ০৫:১৯ অপরাহ্ণ ৬৭৯৭ বার পঠিত
কোরআনে বর্ণিত অলৌকিক সিন্দুকে কী ছিল

বিত্র কোরআনে একটি অলৌকিক সিন্দুকের কথা বর্ণিত আছে, যার নাম তাবুত। এই সিন্দুকে মহান আল্লাহ বিশেষ বরকত রেখেছিলেন, তাই বনি ইসরাঈলরা যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার সময় এই সিন্দুক নিয়ে যেত এবং সব কটি যুদ্ধে বিজয় লাভ করত। কিন্তু হঠাৎ একদিন আল্লাহর হুকুমেই সেই সিন্দুকটি তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে তাদের তৎকালীন রাজা মারা যায় এবং তারা হয়ে পড়ে নেতৃত্বশূন্য যাযাবর জাতি। পরবর্তী সময়ে অবশ্য মহান আল্লাহ তাদের কাছে সেই সিন্দুক ফিরিয়ে দেন। এবং সিন্দুকের মাধ্যমেই তাদের পরবর্তী নেতা নির্বাচন করে দেন। কী ছিল সেই অলৌকিক সিন্দুকে, যার কারণে মহান আল্লাহ এই সিন্দুকের মালিকদের গায়েবি সাহায্য করতেন। আজ পবিত্র কোরআন থেকে সেই তথ্য খুঁজে দেখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

পবিত্র কোরআনে সেই সিন্দুকের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদেরকে তাদের নবী বলল, নিশ্চয়ই তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে তোমাদের কাছে ‘তাবুত’ আসবে, যাতে থাকবে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রশান্তি এবং মুসার পরিবার ও হারুনের পরিবার যা রেখে গিয়েছে তার অবশিষ্ট, যা বহন করে আনবে ফেরেশতাগণ। নিশ্চয়ই তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য নিদর্শন, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৮)


পবিত্র কোরআনের এ দ্বারা বোঝা যায় যে বনি ইসরাঈলের সেই অলৌকিক পবিত্র সিন্দুকের ইতিহাসটি রূপকথা নয়; বরং তা আল্লাহর নিদর্শন ছিল। তাতে মুসা ও হারুন (আ.)-এর উত্তরসূরিদের পরিত্যক্ত বরকতময় সম্পদ ও শান্তিদায়ক বস্তুসমূহ ছিল। বনি ইসরাঈলরা যখন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতো তখন তাদের ঐতিহাসিক সিন্দুকটি কাছে রাখত এবং যুদ্ধের ময়দানে একটি তাঁবুর মধ্যে তা সংরক্ষণ করত। এই সিন্দুকের বরকতে আল্লাহ তাদের বিজয় দান করতেন। কিন্তু বনি ইসরাঈল যখন আল্লাহর নাফরমানি করা শুরু করল, নবীদের হত্যা করল, তখন মহান আল্লাহ তাদের ওপর অত্যচারী বাদশাহ চাপিয়ে দিলেন। সে বাদশাহরা তাদের নির্বিচারে হত্যা করত। তাদের ওপর আল্লাহর সাহায্য বন্ধ হয়ে গেল। তারা শত্রুদের কাছে পরাজিত হতে শুরু করল। এই বিপর্যয়কালে গাজা ও আসকালান এলাকার অধিবাসীদের সঙ্গে তাদের এক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বনি ইসরাঈলরা পরাজয় বরণ করে। শত্রুরা বনি ইসরাঈলদের ওপর নিষ্পেষণ চালিয়ে তাদের থেকে সিন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বনি ইসরাঈলের তৎকালীন বাদশার কাছে এই সংবাদ পৌঁছলে তার ঘাড় বেঁকে যায় এবং দুঃখে-ক্ষোভে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় বনি ইসরাঈলের অবস্থা দাঁড়ায় রাখালবিহীন মেষপালের মতো।


এভাবে দীর্ঘ দিন চলার পর মহান আল্লাহ যখন তাদের এ সিন্দুক ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন অবস্থা দাঁড়াল এই যে কাফেররা যেখানেই সিন্দুকটি রাখে, সেখানেই দেখা দেয় মহামারি ও অন্য বিপদাপদ। এমনিভাবে পাঁচটি শহর ধ্বংস হয়ে যায়। যে সিন্দুকটি এত দিন ছিল বরকতময়, সেটাই এখন মহা বিপদের বস্তুতে পরিণত হয়। অবশেষে অবিশ্বাসীরা কেউ আর এই সিন্দুকটি নিজের কাছে রাখার লোভ করল না; বরং অতিষ্ঠ হয়ে দুটি গরুর ওপর সেটি উঠিয়ে হাঁকিয়ে দেয়। ফেরেশতাগণ গরুগুলোকে তাড়া করে এনে তালুতের দরজায় পৌঁছে দেয়। ইসরাঈল-বংশধররা এ নিদর্শন দেখে তালুতের রাজত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করে এবং তালুত মহান আল্লাহর দেওয়া নেতৃত্বভার গ্রহণ করে জালুতের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করলেন। (তাফসিরে বাগাবি: ১/২৩০, আল-মুহাররারুল ওয়াজিজ: ১/৩৩৩, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ২/১৮)

উল্লেখ্য, এই সিন্দুকটি বনি ইসরাঈলের জন্য মহান আল্লাহর পরীক্ষা ছিল। এ জন্য বনি ইসরাঈল যখন বিদআত ও নাফরমানিতে লিপ্ত হলো, সেই একই সিন্দুক থাকা সত্ত্বেও তারা শত্রুর কাছে হেরে গিয়েছিল। এবং আল্লাহর হুকুমে ওই একই সিন্দুক কাফেরদের পাঁচ শহর ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। তাই এর সূত্র ধরে কোনো ওলি-আউলিয়ার ব্যবহৃত জিনিস নিয়ে বিদআত-শিরকে লিপ্ত হওয়া, সেগুলোকে বিপদ থেকে মুক্তির মাধ্যম মনে করা মুমিনের কাজ হবে না। মুমিনের উচিত, একমাত্র আল্লাহর কাছেই তাঁর ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে সাহায্য চাওয়া।