হজের থেকে ফেরার পরে যে করনীয়

প্রকাশকালঃ ২৭ জুন ২০২৪ ০৩:০৯ অপরাহ্ণ ৮১ বার পঠিত
হজের থেকে ফেরার পরে যে করনীয়

হজের বিধি-বিধানে এই সমর্পণের অনুশীলন চলে। উপরন্তু কোনো হজ বা ওমরাহকারী যদি কাবাগৃহের নির্মাতা ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ.)-এর অবস্থা স্মরণ রাখেন, তাহলে তিনি অবশ্যই হজ থেকে আনুগত্য ও সমর্পণের শিক্ষা গ্রহণ করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাঁর প্রতিপালক তাঁকে বলেন, আনুগত্যে নতশির হও, তখন সে (সঙ্গে সঙ্গে) বলল, আমি রাব্বুল আলামিনের (প্রতিটি হুকুমের) সামনে মাথা নত করলাম।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩১)


ধৈর্য, অবিচলতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষা
শুধু ইসমাঈল (আ.)-এর কোরবানি ও সম্পর্কের ঘটনা থেকেই ধৈর্য ও অবিচলতা এবং ত্যাগ ও আত্মত্যাগের শিক্ষা লাভ করা সম্ভব। তিনি বলেছিলেন, ‘পিতা! আপনাকে যা নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে আপনি সেটাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের একজন পাবেন।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১০২)


বায়তুল্লাহর হিদায়াত ও বরকত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘বাস্তবতা এই যে মানুষের (ইবাদতের) জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর তৈরি করা হয়, নিশ্চয়ই তা সেটি, যা মক্কায় অবস্থিত, (এবং) তৈরির সময় থেকেই সেটি বরকতময় ও সমগ্র জগতের মানুষের জন্য হিদায়াতের উপায়।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬-৯৭)

কেউ বায়তুল্লাহর হজ করল অথচ বায়তুল্লাহ যেসব হিদায়াত ও বরকতের কেন্দ্র তা নিয়ে আসতে পারল না, তাহলে তার হজ কেমন হজ হলো? বায়তুল্লাহর প্রধান হিদায়াত হলো তাওহিদ ও একতা। আর তার প্রধান বরকত সম্ভবত শান্তি ও আমানতদারি রক্ষা। ইসলামের ভিত্তিই হলো তাওহিদ ও একতার ওপর। আর ঈমানের মৌলিক শিক্ষা হলো শান্তি বজায় রাখা ও আমানতদারি রক্ষা করা।


পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা
বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা ও অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা, নিয়মানুবর্তিতা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বায়তুল্লাহর হজকারীরা যখন বায়তুল্লাহর নির্মাতাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা শোনেন যে ‘এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে গুরুত্ব দিয়ে বলি যে তোমরা উভয়ে আমার ঘরকে সেই সব লোকের জন্য পবিত্র করো, যারা (এখানে) তাওয়াফ করবে, ইতিকাফে বসবে এবং রুকু ও সিজদা আদায় করবে।
’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৫)


মাতা-পিতার আনুগত্য

হজের সৌভাগ্য যেসব সন্তানের হয়েছে, তাদের ইসমাঈল (আ.)-এর দৃষ্টান্ত থেকে মাতা-পিতার আনুগত্যের শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক, যতক্ষণ না মাতা-পিতা ঈমান ও ইসলামের পরিপন্থী কোনো নির্দেশ দেন।


আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি
আল্লাহর নিদর্শনকে আরবিতে শাআয়ের বলা হয়। শাআয়ের মানে এমন সব কথা, কাজ, স্থান ও সময়, যা আল্লাহ তাআলা ইসলাম ও মুসলমানের জন্য নিদর্শন বা প্রতীক নির্ধারণ করেছেন। এগুলো মূলত আল্লাহ তাআলার কুদরত ও রহমতের নিদর্শন এবং ইসলামের প্রতীক। ইসলামের অনেক প্রতীক আছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো—কালামুল্লাহ (কুরআন মাজিদ); বায়তুল্লাহ ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো (যেমন—হারামের ভূমি, সাফা-মারওয়া, মিনা-মুজদালিফা, আরাফাহ ইত্যাদি); রাসুলুল্লাহ (সা.); আল্লাহ তাআলার সব ইবাদত-বন্দেগি; বিশেষত কালেমা, নামাজ, জাকাত, সাওম, হজ ইত্যাদি।

 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা হজের আহকাম ও বিধান বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এসব কথা স্মরণ রেখো। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ যেসব জিনিসকে মর্যাদা দিয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষা করবে, তার জন্য এই কাজ অতি উত্তম তার প্রতিপালকের কাছে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩০)


হাজিদের সংকল্প

ক.  যে চোখ দিয়ে আল্লাহ তাআলা কাবা দর্শনের তাওফিক দিয়েছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হারাম দেখিয়েছেন, সেই চোখের হেফাজত করা, চোখের অন্যায় ব্যবহার না করা, ইনশাআল্লাহ।

খ.  হাদিসে আছে, ‘যে হজ করল এবং সব অশ্লীলতা ও গুনাহর কাজ থেকে বিরত থাকল, সে সদ্যোজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে গেল। তাই আল্লাহ তাআলার কাছে আশা রাখা, তিনি আমার হজ কবুল করেছেন এবং এর বদৌলতে আমাকে নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ করেছেন। ইনশাআল্লাহ, আমি পাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করব। আল্লাহ না করুন কোনো গুনাহ হয়ে গেলেও তাত্ক্ষণিক তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে আবার পবিত্র হয়ে যাব।

গ.  এই সংকল্প করা যে বিদায় হজের বিভিন্ন স্থানে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে যে বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন তার সব কিছু মনেপ্রাণে মানব এবং তার ওপর দৃঢ় ও অটল থাকব।

ঘ.  মনে করতে হবে, হজের যত মর্যাদা ও কল্যাণ আছে, সবই মাবরুর (কবুল) হজের সঙ্গে সংযুক্ত। মাবরুর হজের অর্থ নেক ও পবিত্র হজ। আমার হজটি মাবরুর হলো কি না এটা তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলাই জানেন। তবে এর একটি বাহ্যিক নিদর্শনও রয়েছে। তা হলো, হজের পর দ্বিনদারি ও ঈমানি অবস্থার উন্নতি হবে। এর অর্থ শুধু নামাজ-রোজার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, নফল ইবাদতের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া, বাহ্যিক বেশভূষা ঠিক হয়ে যাওয়া নয়; এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজের জীবনে হালাল-হারাম বেছে চলা। হারাম উপার্জন থেকে বিরত থাকা। সততা ও বিশ্বস্ততাকে নিজের প্রতীক হিসেবে ধারণ করা। সব ধরনের খেয়ানত, ধোঁকা ও প্রতারণা এবং জুয়া, সুদ-ঘুষের মতো সব ধরনের নাজায়েজ কাজ, নাজায়েজ লেনদেন এবং সব অন্যায়-অপরাধ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা।

ঙ.  আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর ঘর দেখা ও জিয়ারত করার তাওফিক দিয়েছেন, তখন এই নিয়ামতের মর্যাদা রক্ষা করা। আল্লাহর অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত তাঁর শোকর আদায় করতে থাকা। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমিন।