চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ডলার–সংকটের প্রভাব

প্রকাশকালঃ ১৮ জুলাই ২০২৩ ০৫:৩৬ অপরাহ্ণ ১৭১ বার পঠিত
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ডলার–সংকটের প্রভাব

তিন বছর ধরে শুল্ক-কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি কমছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।

শুল্ক-কর আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তেজ কমে গেছে। এখন আর আগের মতো শুল্ক-কর আদায় করতে পারছে না তারা। এর অন্যতম কারণ হলো, ডলার–সংকটের কারণে আমদানিতে রাস টানা। ফলে মূলধনি যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য ও ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হিসেবে দিনে দিনে মোংলা ও পায়রা বন্দরের গুরুত্ব বাড়ছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আদায়ে আগের গতি হারিয়েছে। তবে এখনো এই কাস্টম হাউস দেশের বৃহৎ শুল্ক-কর আদায়কারী সংস্থা।

দেশের মোট শুল্ক-কর আদায়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যদিও সদ্যবিদায়ী ২০২২–২৩ অর্থবছরে শুল্ক–কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি এই কাস্টম হাউস। দেশে শুল্ক-কর আদায়ের বৃহত্তম উৎসটি অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই আশানুরূপ পারদর্শিতা দেখাতে পারছে না। যেমন গত ১০ বছরে মাত্র একবার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করেছে। সেটি হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকার শুল্ক কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। এর বিপরীতে আদায় করেছে ৬১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ১২ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। সেবার সংস্থাটি ৫৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা আদায় করেছিল।

গত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাত্র চার মাসে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। বাকি সব মাসে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম, আর স্থানীয় বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া। তাই আমদানিকারকদের ওপর ব্যাংকগুলোর নানা ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে। এসব কারণে মালামাল আমদানি কম হয়েছে।


গত অর্থবছরে কেন পারল না
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছরের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি মূলধনি যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য, লোহা ও জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে দেশের আমদানিকারকদের বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে হয়েছে।

আবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতও কমেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকার কৃচ্ছ্রসাধনসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ঋণপত্র (এলসি) খোলায় নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ফলে আমদানি কমে যেতে থাকে। ৮৬ টাকার ডলার এখন কিনতে হচ্ছে কমপক্ষে ১০৯ টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২–২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২৯ শতাংশের মতো কমেছে। মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ২২ শতাংশ কমেছে। ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমেছে ১০ শতাংশের মতো। এই তিন ধরনের পণ্য আমদানির বিপরীতেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করে থাকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এসব পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব খাতে।


কোভিডের পর গতি কমেছে
২০২০ সালের প্রথমার্ধে কোভিড শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজস্ব আদায়ের গতি কমছে। যেমন কোভিডের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ২১ হাজার কোটি টাকার ঘাটতির মুখে পড়ে। ওই বছর ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়, তবে তা এর আগের বছরের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা কম ছিল।

২০২০-২১ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়। প্রথমবারের মতো আদায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস আগের বছরের চেয়ে ৭ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা বেশি আদায় করে। বিদায়ী তথা সর্বশেষ অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় আদায় বাড়ে ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা।