ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর: শ্রম খাতে ব্যাপক সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ গত এক বছরে অভূতপূর্ব বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শ্রমিক, মালিক ও সরকারের কার্যকর ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা এই অগ্রগতির মূল কারণ। তিনি উল্লেখ করেন, “এই সহযোগিতা শ্রম অধিকার, শিল্প শান্তি ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।”
ড. সাখাওয়াত হোসেন তুলে ধরেন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এর মধ্যে রয়েছে ১৭ নভেম্বর গেজেট প্রকাশিত বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫, যা শ্রমিকদের অধিকারের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ অধ্যাদেশে গৃহস্থালি ও কৃষি শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার, ১২০ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটি, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্তি নিষিদ্ধকরণ, ইউনিয়ন গঠনের ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা ২০-এ নামানো এবং বাধ্যতামূলক ভবিষ্যৎ তহবিল প্রতিষ্ঠার মতো পদক্ষেপ রয়েছে।
অন্যান্য অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে বেকার শ্রমিক সুরক্ষা কর্মসূচি (ইউডব্লিউপিপি) বাস্তবায়ন নীতি ২০২৫, কাস্টমস সার্ভিসকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা এবং তৈরি পোশাক খাতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করা। সাতটি শিল্প খাতে ন্যূনতম মজুরি সংশোধন করা হয়েছে এবং আরও ২১ খাতে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা চলছে।
অর্থনৈতিক সুবিধা ও কল্যাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বেক্সিমকো গ্রুপের ৩১,৬৬৯ শ্রমিক ও কর্মকর্তাকে ৫৭৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা, নাসা গ্রুপের ১৭,১৩৪ কর্মচারীকে ৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা প্রদান এবং সেন্ট্রাল ফান্ড ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ২২,৯৪৮ শ্রমিক ও পরিবারের কাছে ৮০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ইইউ তহবিল থেকে ১,৭৫৫ বেকার শ্রমিককে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিমের আওতায় ৮১ জনকে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩৪৭টি নতুন ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধিত, ৪৪টি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, ৩,৪৫৩ শিশুকে শ্রম থেকে সরানো, ১১,৬৯১টি পরিদর্শন সম্পন্ন এবং ১৬টি আইন লঙ্ঘনের মামলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানায় ৩৪৭টি শিশু ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন এবং ১,২৭০ নারীর জন্য ৩২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মাতৃত্বকালীন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থানও শক্তিশালী হয়েছে। আইএলও কনভেনশন ১৫৫ ও ১৮৭ অনুমোদনের মাধ্যমে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৫টি দেশের সমন্বয়ক হিসেবে নির্বাচিত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা জনিত ক্ষতিপূরণ বীমা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইনস্টিটিউট চালু, ময়মনসিংহে নতুন শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা (যা ইতোমধ্যে ১৩,০১৩ মামলা নিষ্পত্তি করেছে) এবং নতুন কর্মসংস্থান অধিদপ্তর গঠনের কাজ। সরকার ৪৪ হাজারের বেশি লাইসেন্স নবায়ন থেকে ৯ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে, চাকরি মেলায় ৪৩৫ জন কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “এসব অর্জন শ্রমিক, মালিক ও সরকারের দৃঢ় ঐক্যের প্রতিফলন, যা আধুনিক, নিরাপদ ও বৈশ্বিক মানসম্পন্ন শ্রম খাতের ভিত্তি গড়ে তুলেছে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে, যা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করবে, শিল্প খাতের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।