স্পাইডারম্যানকে নিশ্চয়ই আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না। কমিক বুক ইতিহাসের সর্বকালের সেরা চরিত্রগুলোর তালিকা করলে শীর্ষে থাকবে স্পাইডারম্যানের নাম। সিনেমা থেকে শুরু করে টিভি পর্দা কিংবা কমিক বুকের পাতা স্পাইডারম্যান মানেই অন্য রকম এক আলোড়ন। বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়ো, স্পাইডারম্যানের দর্শক সবাই।
আগামী ২ জুন বাংলাসহ ১০টি ভাষায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে ‘স্পাইডারম্যান’ ফ্র্যাঞ্চাইজির এনিমেশন সিনেমা ‘স্পাইডারম্যান : অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার ভার্স’। একই দিনে বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাবে ছবিটি। অন্যদিকে কোরিয়ান চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকদের জন্য সুখবর হলো, এবার দেশে বসেই বড় পর্দায় দেখা যাবে কোরিয়ান ছবি। ২ জুন স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সাম্প্রতিক আলোচিত ছবি ‘৬/৪৫’।
ফিল লর্ড, ক্রিস্টোফার মিলার এবং ডেভিড ক্যালাহামের চিত্রনাট্য থেকে ছবিটি পরিচালনা করেছেন যৌথভাবে জোকিম ডস সান্তোস, কেম্প পাওয়ারস এবং জাস্টিন কে. থম্পসন। অস্কার আইজ্যাক, হেইলি স্টেইনফেল্ড, জেক জনসন, ইসা রে, ব্রায়ান টাইরি হেনরি এবং লুনা লরেন ভেলেজের সাথে শ্যামিক মুর কণ্ঠ দিয়েছেন। মার্ভেলের কমিকস সিরিজের চরিত্র হলেও এই স্পাইডারম্যান টম হল্যান্ড নন।
বরং এটি পুরোপুরি একটি কম্পিউটার এনিমেটেড সিনেমা। যেখানে তরুণ স্পাইডারম্যান কৃষ্ণাঙ্গ। তার চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন শামিক মুর। পিটার পার্কারের ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছেন মার্কিন অভিনেতা জেক জনসন। গোয়েন স্টেসির ভূমিকায় শোনা যাবে হেইলি স্টেনফিল্ডের কণ্ঠ।
২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্পাইডারম্যান : ইনটু দ্য স্পাইডার ভার্স’ সিনেমার সিক্যুয়েল এটি। আগের সিনেমায় দেখা গিয়েছিল, পৃথিবীতে স্পাইডারম্যান একা নয়, বরং মাল্টিভার্সের দুনিয়ায় রয়েছে আরো অনেক অনেক স্পাইডারম্যান। তাদের সবাই পিটার পার্কার নয়, কেউ মাইলস মোরালেস, কেউ গুয়েন স্টেসি, কেউ আবার পেনি পার্কার। বলতে গেলে স্পাইডারম্যান মানে শুধু একজন মানুষ নয়, বরং স্পাইডারম্যান একটি পরিচয়। পৃথিবীভেদে স্পাইডারম্যান হয়ে উঠতে পারে যে কেউ। সামনে মুক্তি পাওয়া সিনেমায়ও দেখা মিলবে ভিন্ন স্পাইডারম্যানের। আর এই ভিন্ন স্পাইডার-পিপলদের মিলনমেলায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন চরিত্র। তেমনই একজন হলেন পবিত্র প্রভাকর। কাকা ভীম ও কাকি মায়ার সঙ্গে মুম্বাইয়ে বসবাস করা পবিত্র আর্থ-৫০১০১-এর স্পাইডারম্যান। প্রথমবারের মতো কমিকস থেকে তুলে আনা কোনো ভারতীয় চরিত্রকে দেখা যাবে সিনেমার পর্দায়। ব্লকবাস্টার এই হলিউড সিনেমায় পবিত্র প্রভাকরের চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান কমেডিয়ান কারান সোনি। আর সেই চরিত্রের হিন্দি এবং পাঞ্জাবি ভার্শনে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের জনপ্রিয় ক্রিকেটার শুবমান গিল। তাই ছবিটি নিয়ে ভারতীয় দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা বেশ তুঙ্গে। গোটা বি
শ্বে মুক্তি পাওয়ার আগের দিনই ভারতে মুক্তি পাবে এ ছবি। সোনি পিকচার্স রিলিজিং ইন্টারন্যাশনাল ভারতীয় শাখার প্রধান বলেছেন, “সবশেষ ছবি ‘স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম’ সুপারহিরোর জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা চাই ঘরে ঘরে সুপারহিরোর অনুরাগীরা থাকুক। সেই ভাবনা থেকেই ১০টি ভাষায় ‘স্পাইডার-ম্যান: অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’ মুক্তি পাচ্ছে।" ভারতসহ সারা বিশ্বে ছবিটি দারুণ সাফল্য পাবে বলে আশাবাদী নির্মাতারা।
গা ছমছমে থ্রিলার, ধুন্ধুমার অ্যাকশন কিংবা রোমান্টিক সিনেমা নির্মাণ করে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছেন কিম কি দুক, বং জুন–হো, পার্ক চানুকের মতো কোরিয়ান নির্মাতারা। নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগ থেকে সিনেমা ও ড্রামা সিরিজের ফ্রেমে ফ্রেমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কোরিয়ান সংস্কৃতি; কোরিয়ান সংস্কৃতির এ উত্থানকে ‘কোরিয়ান ঢেউ’ হিসেবে বিবেচনা করেন বিশ্লেষকেরা। শূন্য দশকের গোড়ার দিক থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘কোরিয়ান ঢেউ’ আছড়ে পড়েছে। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তুমুল আলোচিত দুই কোরিয়ান সিনেমা ‘ওল্ড বয়’ ও ‘মেমোরিজ অব মার্ডার’ বাংলাদেশি দর্শকদের মধ্যেও আলোড়ন তুলেছিল। এই দুই সিনেমা দেখেই কোরিয়ান সিনেমার ‘খনি’ আবিষ্কারের কথা বলেছেন অনেক দর্শক। পরে ‘মিরাকল ইন সেল নম্বর সেভেন’, ‘ট্রেন টু বুসান’এর মতো সিনেমার বদৌলতে কোরিয়ান সিনেমার পাঁড় ভক্তদের ছাপিয়ে সাধারণ দর্শকদের মধ্যেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালে অস্কারে বাজিমাত করেছে বং জুন-হোর ‘প্যারাসাইট’; অস্কারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অইংরেজিভাষী কোনো চলচ্চিত্র সেরার পুরস্কার ঘরে তুলেছে। যারা কোরিয়ান সিনেমার নিয়মিত দর্শক না, এমন অনেকেও ‘প্যারাসাইট’, ‘মিরাকল ইন সেল নম্বর সেভেন’,
‘ট্রেন টু বুসান’ দেখেছেন। গত আগস্টে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘কার্টার’ নিয়ে তো বলা যায় বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে গেছে। নেটফ্লিক্সের গ্লোবাল টপ চার্টে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৯০টি দেশে সেরা দশের তালিকায় ছিল সিনেমাটি। ধুন্ধুমার অ্যাকশন আর ওয়ান টেক সিনেমার মতো করে তৈরি করা ‘কার্টার’ দিয়ে দর্শককে বলা যায় আবিষ্ট করে রেখেছেন নির্মাতা। জনপ্রিয়তার কথা তো গেল, এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যাক। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কোরিয়ার সিনেমার সাম্প্রতিক সাফল্য ঈর্ষণীয়। অবাক করা বিষয়, কোরীয় চলচ্চিত্র স্থানীয় বাজারের ৬০ শতাংশ শেয়ার দখল করে রেখেছে। নিজ দেশের চলচ্চিত্র বাজারে এমন রাজত্ব করা দেশ মাত্র তিনটি। কোরিয়া ছাড়া বাকি দুটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। এমনকি কোরিয়ান সিনেমা এখন বলিউডেও নিয়মিত রিমেক হচ্ছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য সুখবর হলো, এবার দেশে বসেই বড় পর্দায় দেখা যাবে কোরিয়ান ছবি। ২ জুন স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সাম্প্রতিক আলোচিত ছবি ‘৬/৪৫’। কমেডি ঘরানার এ ছবির পরিচালক পার্ক গাইয়ু-তাই। একটি বিজয়ী লটারি টিকিটের উপর কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। একজন দক্ষিণ কোরিয়ার সৈন্য লটারিটি খুঁজে পেয়েছিল, কিন্তু একদিন এটি উত্তর কোরিয়ায় উড়ে যায় এবং একজন উত্তর কোরিয়ার সৈন্য খুঁজে পায়। এই সামরিক কমেডিটি দক্ষিণ কোরিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একটি এলাকায় ঘটে। জায়গাটি ডিমিলিটারাইজড জোন নামেও পরিচিত। যদিও বাস্তবে এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা। লটারি টিকেটকে ঘিরে তৈরি হয় দারুণ এক গল্প। হাস্যরসাত্মক নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী দর্শকদের বিনোদন দেয় ছবিটি। বক্স অফিসেও দারুণ সাফল্য পায় ছবিটি। এরইমধ্যে কোরিয়ান বেশ কিছু পুরস্কারও জিতে নিয়েছে ‘৬/৪৫’।