ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনডাউমেন্ট ফান্ড হতে পারে কয়েক হাজার কোটি টাকার
প্রকাশকালঃ
২০ মে ২০২৪ ০৪:১৯ অপরাহ্ণ ১৩২৪ বার পঠিত
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে নানা পেশায় সফল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েক লাখ সাবেক শিক্ষার্থী। তারা দেশের প্রাচীনতম এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা উন্নয়ন কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত জানিয়ে ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, সঠিক উদ্যোগ নিয়ে তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে ঢাবির শিক্ষা উন্নয়নে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল বা এনডাউমেন্ট ফান্ড কয়েক হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (ডুয়া) বার্ষিক সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন ডুয়া নেতারা। অনুষ্ঠানের শুরুতে ডুয়া'র কোষাধ্যক্ষ মাহবুব হোসেন সংগঠনের আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করে জানান, ২০২৩ সালে সংগঠনের আয় হয়েছে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা, আর ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জে বন্যা দুর্গত দশ পরিবারকে ৩১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গৃহনির্মাণ করে দেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য ৮৪ লাখ টাকা দিয়ে দুটি বাস ক্রয় করেছে ডুয়া। এছাড়া গবেষণার জন্য ২৫ লাখ টাকার তহবিল দিয়েছে সংগঠনটি। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ডুয়া'র মোট সম্পদ ১৪ কোটি ১০ লাখ ৪১ হাজার ৩৭০ টাকা ছিলো বলে জানান কোষাধ্যক্ষ।
শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ক্রয় ও গবেষণার জন্য দেয়া তহবিলের প্রসঙ্গ টেনে ডুয়া নেতৃবৃন্দ ও অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, ইউরোপ আমেরিকায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা উন্নয়নে অ্যালামনাইসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেয়া বিনিয়োগযোগ্য তহবিল বা এনডাউমেন্ট ফান্ডই থাকে কয়েক বিলিয়ন ডলার। সঠিক উদ্যোগ নিয়ে সংগ্রহ করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন তহবিলও অল্প সময়ের মধ্যেই কয়েকশ' কোটি টাকা এমন কি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সভার প্রধান অতিথি অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানে গবেষণাকেন্দ্রিক কাজে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রকল্পে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গবেষণায় জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া রিলেশনশিপ ভীষণ জরুরি বলে মনে করে তিনি।
ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের সহযোগিতাও জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর ছয় হাজার নতুন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, যাদের সিংহভাগই গ্রাম থেকে আসে। তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রথম বর্ষ থেকেই কমপক্ষে একটি বৃত্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় নতুন পাঁচটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দর উন্মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য টিএসসি আধুনিকায়ন এবং লাইব্রেরি ও ট্রেজারার অফিসের নতুন ভবন।
সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেন, যুগে যুগে ঢাকা ইউনিভার্সিটির অ্যালামনাইরা দেশকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরতে কাজ করে গেছে। এখন দেশ অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগুলেও ইনটেলেকচুয়াল উন্নয়নে অনেকাংশে পিছিয়ে আছে। যে দেশে বাজেটে নগণ্য বরাদ্দ থাকে গবেষণার জন্য, সে দেশ কীভাবে উন্নত দেশের সাথে পাল্লা দেবে সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নেতা আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ইন্ডাস্ট্রিকে আস্থায় না নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বা হাজার কোটি টাকার গবেষণা প্রকল্পও সফল হবে না। তার মতে, ইন্ডাস্ট্রিই গবেষণার ব্যবহারকারী আর ইন্ডাস্ট্রির চাহিদাই বলে দেয় কোন গবেষণা কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য।
তিনি বলেন, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় একটি চেয়ার দান করলেও তা লিখিত রাখা হয় আর এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যালামনাইরা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভবন তৈরি করে দেয়ার প্রস্তাব দিলে তা ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। উন্নত বিশ্বের মতো করপোরেটগুলোর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।
ডুয়া'র নেতা জানান বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বে অবস্থান করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের সেতুবন্ধন হিসেবে একটি ডিজিটাল নেটওয়ার্ক প্লাটফর্ম কানেক্ট (Konnekt) গড়ে তুলেছে ডুয়া। এটিতে যুক্ত হয়ে তারা একে অপরের সাথে সহজে সংযোগ স্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষার্থী ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মোরাল ভ্যালু উন্নয়নের জন্য ডুয়া কর্মসূচি নিয়েছে। সমাজ উন্নয়নে এ কর্মসূচি এরইমধ্যে সারাদেশে সাড়া জাগিয়েছে বলেও জানান তিনি।