২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ থাকছে মাত্র ২৫০ কোটি টাকা
প্রকাশকালঃ
০৬ জুন ২০২৪ ০৪:১৪ অপরাহ্ণ ৯১০ বার পঠিত
২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ থাকছে মাত্র ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য থাকছে ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য থাকছে ৫০ কোটি টাকা, যা দিয়ে খুব স্বল্পসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সম্ভব। তবে বরাদ্দ থাকলেও আসছে অর্থবছরের নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন গ্রহণ করা হবে কি না তা নির্ভর করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর।
নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ থাকছে ২৫০ কোটি টাকাজানা যায়, দেশে বর্তমানে স্বীকৃতি বা অনুমোদনপ্রাপ্ত কিন্তু নন-এমপিও এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। তাঁরা মূলত বেতন-ভাতা ছাড়াই শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি নামমাত্র বেতন দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির আশায় দীর্ঘদিন চাকরি করে যাচ্ছেন।
ফলে প্রতিবছর বাজেট এলে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফোটে, এবার বরাদ্দ থাকছে তো! শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বাজেট) মো. নূর-ই-আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ চেয়েছি। যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে আমাদের বিভাগের জন্য এ খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে।’ এ ছাড়া কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তারাও আসছে অর্থবছরে নতুন এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ চেয়েছে। তবে তাদের বিভাগে এ খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরেও নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে মিল রেখে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদেরও ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। সে জন্য চলতি অর্থবছরের এই ২৫০ কোটি থেকে বেশির ভাগ টাকা প্রণোদনা খাতেই চলে যায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ২০০ কোটির মধ্যে ১৮৫ কোটি টাকাই প্রণোদনা খাতে চলে যায়। খুব সামান্য টাকাই বাকি থেকেছে, যা দিয়ে আবেদন করা নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি অর্থবছরে সরাসরি আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করা না হলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশেষ ব্যবস্থায় ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হয়েছে, যার বেশির ভাগ শিক্ষক-কর্মচারী এখনো বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া শেষে বেতন-ভাতায় যুক্ত হতে পারেননি। আসছে অর্থবছরের নতুন এমপিওভুক্তির বাজেট থেকে যদি তাদের অর্থের সংস্থান করতে হয়, তাহলে আগামী বছরের এমপিওভুক্তিও ঝুলে যেতে পারে। বরাদ্দ থাকলেও নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে কি না তা নির্ভর করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর।
সূত্র জানায়, আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার প্রায় দুই হাজার ১০০টি প্রতিষ্ঠানকে নতুন এমপিওভুক্তি দেয়। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যেও বিশেষ বিবেচনায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি দেওয়া হয়। তবে ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পর প্রায় ৯ বছর এই প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল।
জানা যায়, যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে প্রতিবছর এমপিওভুক্ত করা হয়, সে জন্য একটি নীতিমালা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই আলোকে বিশেষায়িত অটোমেটেড সফটওয়্যারে এমপিওর আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এমপিওভুক্তির প্রধান তিনটি মানদণ্ড হলো—শিক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর), পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর) এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার (৪০ নম্বর)। আবার প্রতিষ্ঠানভেদে কমপক্ষে কতজন শিক্ষার্থী থাকতে হবে, কতজন পরীক্ষা দিতে হবে এবং পাসের হার ন্যূনতম কত হতে হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ওই নীতিমালায়।
বাংলাদেশ নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন নবী ডলার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখন নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের নানা কিছু আত্মস্থ করতে হচ্ছে। তারা যদি বেতনই না পান, তাহলে কিভাবে অভ্যস্ত হবেন? প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বলেছিলেন, প্রতিবছরই যেন এমপিওভুক্ত করার কাজটি বহাল থাকে। কিন্তু বরাদ্দ থাকার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে কাজটি করছে না। আমরা চাই, যেসব প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বা অনুমোদন রয়েছে, মানবিক কারণে হলেও তাদের সবাইকে যেন আসছে অর্থবছরের বাজেটে এমপিওভুক্ত করতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়।’