চীনের প্রতি মনোভাব বদলাতে চান জার্মান

প্রকাশকালঃ ১০ মে ২০২৩ ০৫:৫০ অপরাহ্ণ ১৫৮ বার পঠিত
চীনের প্রতি মনোভাব বদলাতে চান জার্মান

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্লিন সফরে জার্মানি ও চীনের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে চীনের খোলামেলা সমালোচনা সত্ত্বেও সে দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে চান না জার্মান নেতারা।

ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার জের ধরে জার্মানি তথা পশ্চিমা বিশ্বকে যেভাবে প্রায় ‘রাতারাতি' মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কার্যত ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, সেই ধাক্কা এখনো পুরোপুরি সামলে ওঠা যায়নি। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী চীনও তাইওয়ান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তর্জনগর্জন করে চলায় চীনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়টি এখন থেকেই পশ্চিমা নেতাদের দুশ্চিন্তায় ফেলছে। ইউরোপ-আমেরিকার শিল্প-বাণিজ্য জগৎ রাশিয়ার তুলনায় চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ফলে চীন থেকে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও যন্ত্রাংশ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করা বা সে দেশের বাজারে নিজস্ব পণ্য বিক্রি না করার কথা কল্পনা করা কঠিন।


মঙ্গলবার একাধিক জার্মান নেতার মুখে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মন্তব্য শোনা গেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক ভাষণে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস চীনের সঙ্গে উত্তেজনা সত্ত্বেও ‘ডি-কাপলিং' বা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার বদলে ‘ডি-রিস্কিং' বা সেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মঙ্গলবারই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিন গাং বার্লিনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকে জার্মানিকে ‘ডি-কাপলিং' সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। বেয়ারবক ও জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বেয়ারবক বলেন, ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার অর্থ রাশিয়ার পক্ষ নেওয়া। তিনি বার বার প্রকাশ্যে চিন গাং-এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিন গাং-ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কড়া কথা শুনিয়েছেন। তিনি চীনা কোম্পানিগুলোর উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আটটি চীনা কোম্পানির কার্যকলাপের ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপানো হলে চীনও নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় পাল্টা পদক্ষেপ নেবে। বেয়ারবক বলেন, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ঘুরপথে সে দেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি পাচার এড়াতে চায় ইইউ। তিনি বলেন, মাইক্রোচিপের মতো যন্ত্রাংশ যুদ্ধক্ষেত্রেও ব্যবহার করা সম্ভব বলে রাশিয়াকে সে ধরনের পণ্য সরবরাহ করা উচিত নয়। বেয়ারবক চীনের উদ্দেশ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।


চীনের সঙ্গে জার্মানি তথা ইউরোপের সম্পর্কে বার বার উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহান্তে জার্মান অর্থমন্ত্রী লিন্ডনারের পূর্বনির্ধারিত বেইজিং সফর আচমকা পিছিয়ে দিয়েছে চীনা সরকার। চীনা অর্থমন্ত্রীর ব্যস্ততার কারণে এই সিদ্ধান্তের দোহাই দেওয়া হলেও বিষয়টি কূটনৈতিক স্তরে জটিলতা সৃষ্টি করছে। লিন্ডনার নিজে অতীতের জার্মান সরকারগুলোর তুলনায় চীনের প্রতি আরও ‘আত্মবিশ্বাসী ও বাস্তববাদী' মনোভাবের পক্ষে সওয়াল করছেন। ব্যবসাবাণিজ্য জগত প্রবক্তা ও উদারপন্থি নীতির প্রবক্তা এফডিপি দলের নেতা হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভালো ব্যবসার খাতিরে আমাদের উদারপন্থি মূল্যবোধ কিনে নেওয়া সম্ভব নয়।’ 

উল্লেখ্য, লিন্ডনারেরই এফডিপি দলের নেতা ও জার্মান শিক্ষামন্ত্রী বেটিনা স্টার্ক-ভাৎসিঙার গত মার্চ মাসে তাইওয়ান সফর করায় বেইজিং জার্মানির জোট সরকারের এই শরিক দলের প্রতি কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। লিন্ডনার নিজেও ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার বিষয়ে চীনের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি চীনে মানবাধিকারের বিষয়েও স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন। তবে শলৎসের মতো তিনিও চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাজার থেকে ‘ডি-কাপলিং'-এর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।