ঢাকা প্রেস
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:-
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা নদ-নদীর চর দখল করা নিয়ে শুরু হয়েছে 'জোর যার মুল্লুক তার'।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার (৯ নভেম্বর) উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার মৌজার মৃত হায়দার আলীর ছেলে আঃ সালাম গং ১ একর ৯০ শতক জমিতে সদ্য ভুট্টা বীজ বপন করেন। জানতে পেয়ে পার্শ্ববর্তী কামারের ভিটা গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে জেলাল মিয়া গং নিজ জেলা ও উপজেলা ছাড়াও বগুড়া ও রংপুরের বিভিন্ন উপজেলার ভাড়াটে লোকজন নিয়ে বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আঃ সালামের পরিবারে হামলা চালান। হামলাকারীরা ব্যাপক মারপিট করে আঃ সালাম গংয়ের খড়ের ঘর সরিয়ে নিয়ে আগুনে পুড়ে দেয়। আঃ সালাম গং বাপ-দাদার স্বত্ব অনুযায়ী আগে থেকেই জমিগুলো চাষাবাদ করে আসছেন। বর্ষাকালে ডাঙ্গায় বসবাসের মতো ঘরবাড়ি থাকলেও শুকনো মৌসূমে জমিগুলো চাষাবাদের কারণে ওই ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন আঃ সালাম। জেলাল মিয়া ও তার দলবলের মারপিটে আঃ সালামসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আহত হন। তাদের মধ্যে আঃ সালাম, শহিদ মিয়া ও কাজভান বেগমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, জেলাল মিয়া ও তার দল আঃ সালামের স্ত্রী কাজভান বেগমকে বিবস্ত্র করে টানাহেঁচড়া করতে দেখে চরের অন্যান্য ছোট ছোট জমিতে কাজ করতে থাকা দুদু মিয়া, বাদশা মিয়া, সাইফুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, চাঁদ মিয়া, কোহিনুর বেগম এগুতে গিয়ে তারাও মারপিটে আহত হন। জেলাল বাহিনীর দলের ৫০ থেকে ৬০ জন লাঠিয়ালের মধ্যে অধিকাংশ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার লোক। তাদের সঙ্গে ছুটিতে আসা একজন সেনা সদস্যও ছিল। তাকে স্থানীয়রা কেউই চিনেননা। এ ঘটনায় আঃ সালাম বাদী হয়ে নাম উল্লেখ পূর্বক ২০ ও অজ্ঞাতনামা আরো ২৫-৩০ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দাখিল করেছেন।
অপরদিকে, জালাল উদ্দিনও বাদী হয়ে আঃ সালাম গংয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই দীপক চন্দ্র রায় বলেন, উভয় পক্ষের মামলা ও এজাহারে বর্ণিত অভিযোগের প্রক্ষিতে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছেনা।
উল্লেখ্য, ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা নদ-নদীর চরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বন্যা পরবর্তী আগাম জাতের ধান কর্তন করে পরবর্তী ফসল হিসেবে জমি তৈরী করা, ভুট্টা, গম, রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানান ফসল চাষে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা কেউ ফসল চাষ করেছেন। আবার কেউ বীজ বুনন শুরু করেছেন। এরমধ্যে একটি মহল বিগত দিনের মতই বীজ বপণ করা চরের জমি দখলে প্রভাব ঘাটানো শুরু করেছে। এটা কোন নিত্য-নৈমত্তিক ঘটনা নয়; প্রভাবশালী মহলের কাছে পরিণত হয়েছে চর দখলের সংস্কৃতিতে।
স্থানীয়রা আরো জানান, জেলাল মিয়া একজন ভূমিদস্যু। চরাঞ্চল দখল করে অন্যের চাষাবাদ করা ফসল ভোগ করা এবারেই নতুন নয়। সে এভাবে প্রভাব খাটানোকে পুঁজি করে এ সংস্কৃতিতে নিয়োজিত রয়েছে দীর্ঘকাল থেকে।
এ অবস্থা শুধু লালচামার চরেই না। ব্রহ্মপুত্র-তিস্তানদী বেষ্টিত ইউনিয়নগুলোর পরিসীমায় অবস্থিত অন্যান্য চরগুলোতেও চলছে বলে জানা গেছে।