প্রকৃতিতে বইছে তাপপ্রবাহ। নদী-নালা, খালবিল শুকিয়ে চৌচির। পানির জন্য হাহাকার অবস্থা সবখানে। অথচ এই অসময়ে হঠাৎ করেই ভাঙতে শুরু করেছে যমুনা নদী। এতে শঙ্কায় নদীপাড়ের হাজারো মানুষ। আর তাই নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নদীপাড়ে গিয়ে বিশেষ মোনাজাত করেছেন স্থানীয়রা। যমুনা নদীর এমন চিত্র পাবনার বেড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, মসজিদ। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসী। যমুনা নদী থেকে বালু তোলার কারণেই প্রতি বছর ভাঙন হয় বলেও অভিযোগ তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চর নাগদাহ, হাটাইল, আরালিয়া, চর সাড়াসি গ্রামসহ নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের লেওলাই পাড়া, মাছখালি, মরিচাপাড়া, রাকশা, নতুন বাটি খরাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ভাঙন চর সাড়াসি ও চর নাগদাহ গ্রামের ভাঙনকবলিত অসহায় মানুষগুলো অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। অনেকেই আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
গত দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রায় অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি ও চড় সাড়াসি গ্রামে অন্তত ২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসবাসের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। নতুন ভারেঙ্গার লেওলাইপাড়া গ্রামের নদীপাড়ের ফসলি জমি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে বিলীন হচ্ছে নদীতে। আর সে দৃশ্য দেখে বাসিন্দাদের চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ। উপায় না পেয়ে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে নদীপাড়ে গিয়ে বিশেষ মোনাজাত করেছেন স্থানীয় মুসল্লিরা।
চড় সাড়াসি গ্রামের কৃষক ময়েন উদ্দিন প্রামানিক বলেন, ‘এবার বর্ষা মৌসুম আসার আগেই হঠাৎ করে যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনে আমি পাঁচবার বসতভিটাসহ প্রায় দশ বিঘা জমি হারিয়েছি। সপ্তাহ খানেক আগে আবারও বসতভিটা হারিয়েছি।’ চর নাগদাহ গ্রামের বাসিন্দা আবুল ফজল বলেন, আমাদের দুঃসময়ে কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের গ্রামের একটি অংশ নদীতে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
হাটাইল চরের কৃষক জাবেদ আলী মোল্লা বলেন, প্রতিবছরই বর্ষাকালে আমাদের চরের মানুষ নদী ভাঙনে বাড়িঘর জমি হারায়। কয়দিন আগেও আমার দুই বিঘা বোরো ধান ও এক বিঘা তিল ক্ষেত নদীতে চলে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় দশবার আমি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এই নদী। এবার আবার এই অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা শুধু খোঁজখবর নেয়। কিন্তু কোনো কাজ শুরু করেনি। এবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ফলে গ্রামবাসীর দিন কাটছে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায়। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে মুজিব বাঁধসহ সরকারি স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, মাদরাসা, দুই-তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি। ভাঙন রোধে দ্রুত জিও ব্যাগ না ফেললে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোরশেদুল ইসলাম বলেন, অসময়ে যমুনা নদী ভাঙনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। সেই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ইতোমধ্যে বেড়ার যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো আমরা পরিদর্শন করেছি। নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।