প্রকাশকালঃ
২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:৫১ অপরাহ্ণ ৬৮৮৬ বার পঠিত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) ছিলেন একজন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তিনি বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচিত। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ই মে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্ম সমাজ সংস্কারক ও লেখক। তাঁর মাতা সারদা দেবী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ ও বিনয়ী নারী।
রবীন্দ্রনাথের শৈশব ছিল সুখের ও সমৃদ্ধ। তিনি বাড়িতেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর দাদা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছিলেন একজন শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান ব্যক্তি। তিনি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সাহিত্যিক জীবন
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক জীবন শুরু হয় ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত “কবিকাহিনী” কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। এরপর তিনি একের পর এক কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও গান রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে:
কাব্যগ্রন্থ: গীতাঞ্জলি, সোনার তরী, মানসী, চিত্রা, ক্ষণিকা, বলাকা, বনফুল, পুষ্পাঞ্জলি, শেষের কবিতা
উপন্যাস: গোরা, চোখের বালি, মালঞ্চ, চার অধ্যায়, দুই বোন
নাটক: রাজা, ডাকঘর, অচলায়তন, মুক্তধারা, রক্তকরবী
ছোটগল্প: গল্পগুচ্ছ, ছিন্নপত্র, পথে প্রান্তে, শেষের রাত্রি
প্রবন্ধ: রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধাবলী
গান: গীতবিতান, গীতিমাল্য, গীতচন্দ্রিকা
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর রচনাগুলির মধ্যে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।
সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নারী শিক্ষার পক্ষে ও নারীর অধিকারের জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি “বঙ্গদর্শন” পত্রিকার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
শেষ জীবন ও মৃত্যু
রবীন্দ্রনাথ ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার ঠাকুরবাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং বাংলায় ভাগবত গীতার অনুবাদ প্রকাশের জন্য সমালোচিত হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এক অবিস্মরণীয় স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।