সরকারি হাসপাতালে জনবলসংকট, ব্যাহত চিকিৎসা সেবা 

প্রকাশকালঃ ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৮ অপরাহ্ণ ৪১৯ বার পঠিত
সরকারি হাসপাতালে জনবলসংকট, ব্যাহত চিকিৎসা সেবা 

ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

 

চিকিৎসক, কর্মচারী আর সরঞ্জামসংকটে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। ছয় বছর আগে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হলেও ১০০ শয্যার জনবল কাঠামো নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই ১০০ শয্যার হাসপাতালের জনবলেরও ৫০ শতাংশ পদ শূন্য। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক রয়েছেন চাহিদার ২৫ শতাংশ।
 

 

এই হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসকের চাহিদা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২০ জন। শুধু যে চিকিৎসকসংকট তা কিন্তু নয়। নার্স, প্যাথলজিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংকটও রয়েছে। হাসপাতালটিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট পদের সংখ্যা রয়েছে ২৯২টি।

 

তার মধ্যে শূন্য পদ ৮৫টি। এই শূন্য পদের মধ্যে ২৩টি পদই চিকিৎসকের। ফলে চিকিৎসাকেন্দ্রটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। এমনকি পরিচ্ছন্নতা ও ওষুধ সংকটও আছে।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল ও ওষুধের চাহিদা জানিয়ে বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে বর্তমানে চিকিৎসক প্রয়োজন ৫৮ জন। কিন্তু এই জনবলের অনুমোদন মেলেনি। ১০০ শয্যার মঞ্জুরীকৃত ৪৩ পদের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২০ জন। হাসপাতালটিতে তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে একজন।

 

ফাঁকা পদ মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু, ইএনটি, চর্ম-যৌন সিনিয়র কনসালট্যান্টের। অর্থো-সার্জারির সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও নেই চক্ষু, কার্ডিওলজি, ইএনটি সিনিয়র কনসালট্যান্ট।

অ্যানেসথেশিয়া, অর্থো-সার্জারি, চক্ষু, কার্ডিওলজির পাঁচজন করে থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালটিতে রয়েছে একজন করে। এ ছাড়া একই বিভাগে ছয়জন করে জুনিয়র কনসালট্যান্ট থাকার কথা থাকলেও রয়েছে একজন করে। এর বাইরে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (প্যাথলজি, রেডিওলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলেশন ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ছয়জন করে থাকার কথা থাকলেও রয়েছে একজন করে। এই হাসপাতালটিতে ঘাটতি রয়েছে মেডিক্যাল অফিসারেরও। সিনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদের ৯টি পদই শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১২টি পদের পাঁচটি শূন্য। নেই চক্ষু রোগের চিকিৎসক ও প্যাথলজিস্ট।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের সত্যতা মেলে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বলছেন, সারা দিনে একবার চিকিৎসকের দেখা মেলে। দুপুরের পর হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ছাড়া পরের দিন সকালের আগে ওয়ার্ডে আর কোনো চিকিৎসকের দেখা মেলে না। কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিলে তাঁর রিপোর্ট দেখাতে হয় পরের দিন।

 

হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রাশেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে পেট ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছি। ভর্তির সময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেখেছেন। এরপর রাত পেরিয়ে সকাল গড়ালেও ওয়ার্ডে কোনো ডাক্তারের দেখা মেলেনি। টয়লেটে যাওয়া যায় না। রুমের ভেতরও ময়লা।’

 

চিকিৎসক ঘাটতি ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে একই অভিযোগ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের রোগী ও তাদের স্বজনদের। হাসপাতালটির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কমপক্ষে ১০ বারের বেশি সময় চিঠি দিয়ে চিকিৎসকের চাহিদা দিয়েছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না।’