রূপকথাই তো। এক বছর আগে খেলোয়াড় বিদ্রোহের কারণে জাতীয় দলের বেশির ভাগ সিনিয়র ফুটবলারকেই হারিয়ে ফেলেছিল স্পেন। পরে জোড়াতালির মাধ্যমে গড় দলে প্রস্তুতি নেয় বিশ্বকাপের। তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বে অংশ নেওয়া স্পেন ফেভারিট তালিকাতেই ছিল না। সেই দলটিই কি না জিতে নিল প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা!
গতকাল সিডনির স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে স্পেনের মেয়েরা। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করে স্পেনবাসীকে বিশ্বজয়ের আনন্দে ভাসিয়েছেন ওলগা কারমোনা। সুইডেনের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও স্পেনের জয়সূচক গোলটা করেছিলেন তিনিই। স্পেনের পুরুষ দল ২০১০ সালে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল দশম বারের চেষ্টায়। সেখানে স্পেনের মেয়েরা বাজিমাত করল তৃতীয় বারেই। ২০১৫ সালে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে স্পেনের মেয়েরা। কানাডায় অনুষ্ঠিত ২৪ দলের সেই আসরের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় স্পেনের মেয়েদের। নিজেদের গ্রুপে চতুর্থ হওয়া স্পেন সব মিলিয়ে হয়েছিল ২০তম! ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপে এসে স্পেনের মেয়েরা উঠেছিল শেষ ষোলোতে। টানা তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে এসে সেই স্পেন এবার এক লাফে চ্যাম্পিয়ন! সেটাও ভাঙাগড়া দল নিয়ে।
স্পেনের পুরুষ দলের সঙ্গে মেয়ে দলের একটা মিল অবশ্য আছে। পুরুষ দলও বিশ্বকাপ জিতেছিল ফাইনালে প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডসকে ১-০ গোলে হারিয়ে। গতকাল স্পেনের মেয়েরাও ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে সেই ১-০ গোলেই। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডও ফাইনালে উঠেছিল এবারই প্রথম। জিতলে তারাও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতো প্রথম বারের মতো। কিন্তু ইংল্যান্ডের মেয়েরা ইতিহাসটা লিখতে পারেননি। তাদেরকে তা লিখতে দেয়নি স্পেনের তারুণ্যনির্ভর দলটি। নামে-ভারে ফাইনালে ইংল্যান্ডই ছিল ফেভারিট। কিন্তু সিডনির ফাইনালে গ্যালারির ৭৫ হাজার ৭৮৪ জন দর্শককে সাক্ষী রেখে, ম্যাচের শুরু থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে থাকে স্পেনের মেয়েরা। স্পেন মাঠের লড়াইয়ের একচ্ছত্র আধিপত্যের ফলও পায় ২৯ মিনিটে। দারুণ এক গোল করে স্পেনকে এগিয়ে দেন ওলগা কারমোনা। খানিক পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিল স্পেন। কিন্তু মিডফিল্ডার জেনিফার হেরমোসোর দুর্বল শট দারুণ দক্ষতায় ধরে ফেলেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক ম্যারি ইয়ার্পস। বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় স্পেনের মেয়েরা মেতে উঠে বিশ্বজয়ের আনন্দে। ইংলিশদের ফেলতে হয় চোখের জল।
মেয়েদের ফুটবলে যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, জার্মানি ও জাপানের পর পঞ্চম দেশ হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল স্পেন।