মেসির রেকর্ড কি হলান্ডের তাণ্ডব থেকে বাঁচবে

প্রকাশকালঃ ২০ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪০ অপরাহ্ণ ১৫৯ বার পঠিত
মেসির রেকর্ড কি হলান্ডের তাণ্ডব থেকে বাঁচবে

পেপ গার্দিওলা কি জয়স্টিক হাতে নিয়ে ভিডিও গেমে আর্লিং হলান্ডকে খেলাচ্ছেন—ম্যানচেস্টার সিটির সর্বশেষ দুই ম্যাচ দেখতে দেখতে এমন প্রশ্ন কারও মনে আসতেই পারে। 

 

দুই ম্যাচে সব মিলিয়ে হলান্ড খেলেছেন দুই ঘণ্টার একটু বেশি। মিনিটের হিসাবে ১২৬। এর মধ্যে এক ম্যাচে করেছেন ৫ গোল এবং অন্যটিতে ৩ গোল। যে ছন্দে হলান্ড খেলেছেন, দুটি ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট খেললে কী হতো কেও জানে!

দুটি ম্যাচেই দ্রুত তুলে নেওয়ায় কোচের ওপর হয়তো কিছুটা অসন্তুষ্টই হয়েছেন হলান্ড। প্রথম ম্যাচের পর তো ডাবল হ্যাটট্রিকের আকাঙ্ক্ষার কথা খোলাখুলিই বলেছিলেন। গতকাল রাতেও হ্যাটট্রিক করার ৪ মিনিট পর তুলে নেওয়া হয় হলান্ডকে।

ম্যাচ–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গার্দিওলা অবশ্য মজা করে বলেছেন, ‘মেসির এফএ কাপের রেকর্ডকে বাঁচাতে হলান্ডকে তুলে নিয়েছি।’ নিছক মজা করে বলা, কিন্তু আসলেই হলান্ডের তাণ্ডব থেকে মেসির রেকর্ডটিকে বাঁচানো সম্ভব? কোন রেকর্ড? বলা হচ্ছে, এক মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড।

 

২০১১–১২ মৌসুমে ক্লাব ফুটবলে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৭৩ গোলের অনন্য এক রেকর্ড নিজের করে নিয়েছিলেন মেসি। শুধু লা লিগাতেই করেছিলেন ৩৭ ম্যাচে ৫০ গোল। মেসির অবিশ্বাস্য সেই রেকর্ডও এখন হলান্ডের চোখ রাঙানিতে পড়েছে। 

আপাতদৃষ্টে অসম্ভব মনে হলেও যে গতিতে হলান্ড এগোচ্ছেন, তাতে মৌসুমের শেষ দিকে গিয়ে মেসির রেকর্ডটি যদি ভেঙে যায়, তা মোটেই বিস্ময়কর কিছু হবে না। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৩৭ ম্যাচে হলান্ড করেছেন ৪২ গোল। অর্থাৎ, ম্যাচপ্রতি গোলসংখ্যা ১–এর বেশি। প্রিমিয়ার লিগে ২৬ ম্যাচে করেছেন ২৮ গোল, চ্যাম্পিয়নস লিগে ৬ ম্যাচে ১০ গোল। এফএ কাপে ৩ গোল ও লিগ কাপে করেছেন ১ গোল। 

প্রিমিয়ার লিগে হলান্ডের হাতে আছে ১১ ম্যাচ। চ্যাম্পিয়নস লিগে ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারলে পাবেন ৫ ম্যাচ। আছে এফএ কাপ ও লিগ কাপ। গত দুই ম্যাচে হলান্ড যে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছেন, তাতে এই পরিসংখ্যান শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

মৌসুমের শুরুতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে সিটিতে আসার পর অন্যরা তো বটেই, হলান্ড নিজেও কি এমন কিছু ভেবেছিলেন! তখন বরং হলান্ডের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ করার লোকই ছিল বেশি। বুন্দেসলিগায় গোলের বন্যা বইয়ে দেওয়া হলান্ডের জন্য প্রিমিয়ার লিগে বিপদই দেখছিলেন অনেকে। কমিউনিটি শিল্ডের শিরোপা লড়াইয়ে লিভারপুলের কাছে হারের পর অনেকে হলান্ডের দুঃসময়ের আগাম ঘোষণাও দিয়ে দেন অনেক বোদ্ধা।

কিন্তু পাশার দান বদলাতে খুব বেশি সময় লাগেনি হলান্ডের। প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম মাসেই রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলে চুপ করিয়ে দেন সবাইকে। সমালোচকের মুখ কি তাতেও বন্ধ করা গেছে! এরপর হলান্ডকে শুনতে হলো, এই ছন্দ সাময়িক। দ্রুতই তার রহস্য উন্মোচিত করে ফেলবেন প্রতিপক্ষ কোচরা। মাঝে কয়েক ম্যাচে ছন্দহীনতার পর সেই সমালোচকদের মুখের হাসি আরেকটু চওড়াও হয়েছিল। কিন্তু শেষ ভাগে এসে হলান্ড আবার যা শুরু করলেন, তাতে ফুটবলের অনেক ইতিহাস তার পায়ে লুটানোর কথা।

প্রিমিয়ার লিগ যুগে প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড়দের মাঝে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটি  হলান্ডের দখলে আসা শুধুই সময়ের ব্যাপার। ৪৪ গোল করে এখন পর্যন্ত সবার ওপরে আছেন রুড ফন নিস্টলরয় এবং মোহাম্মদ সালাহ। আর হলান্ডের গোল এখনই ৪২। সামনের ম্যাচে আরেকটি হ্যাটট্রিক করলে হলান্ড পেরিয়ে যাবেন এ দুজনকে। চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে খেলা খেলোয়াড়দের সম্মিলিত হ্যাটট্রিক সংখ্যা যেখানে ৫, হলান্ডের একারই সেখানে ৬।

প্রিমিয়ার লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডেও বাকিদের ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে হলান্ড। ৩৪ গোল করে এখন পর্যন্ত সবার ওপরে আছেন অ্যান্ডি কোল ও অ্যালান শিয়ারার। ১১ ম্যাচ হাতে রেখে হলান্ডের গোল এখন ২৮। বাকি ম্যাচগুলো দিয়ে এ দুজনকে ছাড়িয়ে যেতে না পারাটাই বরং অবিশ্বাস্য কিছু হবে। আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, লিগে হলান্ডের ২৮ গোল এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে খেলছে, এমন ৭টি দলের মোট গোলের চেয়েও বেশি।

হলান্ডের তিরে বিদ্ধ হওয়ার পর তাকেই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাউদাম্পটন কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানি। হলান্ডের সঙ্গে তুলনায় মেসি–রোনালদোকেও টেনে এনেছেন এই বেলজিয়ান কোচ, ‘আমি মেসি, রোনালদিনহো, জিদান, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো সেরাদের বিপক্ষে খেলেছি। তারা বিশেষ একটি এলিট দলের অংশ; কারণ, সেরা খেলোয়াড়দের পক্ষেও তাদের থামানো কঠিন। আর্লিংয়ের (হলান্ড) মতো খেলোয়াড়েরা একটা পথ বের করবেই।’

চলতি মৌসুমে হলান্ড গোল করাকে এতটাই সহজ বানিয়ে ফেলেছেন যে কোচ গার্দিওলাও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন। বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে এই লোক সমস্যায় পড়বে। প্রতি ম্যাচে তার কাছ থেকে ৩–৪ গোল করে আশা করা হবে। যা সম্ভব হবে না।’

 

হলান্ড অবশ্য এখন চাইলে বলতেই পারেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানের দ্বার বন্ধ করে কী লাভ! গোলের দুয়ার যখন খোলা, গোলকে আসতে দাও। আর এমন ঝরনাধারার মতো গোল আসতে থাকলে তাতে ভেসে যেতে পারে গার্দিওলার প্রিয় শিষ্য মেসির ৭৩ গোলের রেকর্ডও। এখন ‘বেরসিক’ গার্দিওলা প্রতি ম্যাচে হলান্ডকে ৬৩ মিনিটে মাঠ থেকে নামিয়ে না নিলেই হয়!