বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামানের জামায়াতে যোগদান, কিশোরগঞ্জে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:১০ অপরাহ্ণ   |   ৩৪ বার পঠিত
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামানের জামায়াতে যোগদান, কিশোরগঞ্জে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর এই যোগদানকে ঘিরে নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার বাসিন্দা। কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ–২ আসন থেকে তিনি বিএনপির মনোনয়নে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে টানা দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। তিনি একসময় জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তবে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
 

দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি আখতারুজ্জামান। বিভিন্ন ইস্যুতে টক শো ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে তিনি আলোচনায় ছিলেন। শনিবার দুপুরে তাঁর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের খবর প্রকাশ্যে আসে। এ সময় জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের পাশে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
 

জামায়াতে যোগদানের বিষয়টি মুঠোফোনে নিশ্চিত করে আখতারুজ্জামান বলেন, আপাতত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চান না। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে খোলামেলা আলোচনা করবেন বলে জানান।
 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে তিনি দলের আমিরের কাছে প্রাথমিক সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের নীতি ও আদর্শ, দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবিচল অবস্থানের প্রতি আস্থা রেখে তিনি সংগঠনে যোগ দিয়েছেন এবং দলীয় শৃঙ্খলা ও আনুগত্য বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছেন।
 

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জামায়াতের কটিয়াদী উপজেলা আমির মোজাম্মেল হক জোয়ারদার বলেন, সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে আগে কোনো লিখিত অবহিতকরণ আসেনি। তবে জামায়াতের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাঁর যোগদানের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
 

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া এলাকায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রথমে ছবিটি নিয়ে সন্দেহ থাকলেও পরে অনেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কেউ বিষয়টিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে দেখলেও অনেকে সমালোচনাও করেছেন।
 

কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, আখতারুজ্জামানের রাজনৈতিক অধ্যায় অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে অন্য দলে যোগ দিয়ে তিনি কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন, তা সময়ই বলে দেবে।
 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, আখতারুজ্জামান একরোখা স্বভাবের মানুষ এবং টক শোতে দলের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে বারবার বহিষ্কারের মুখে পড়েছেন। বিএনপি তাঁকে একাধিকবার বহিষ্কার করেও ফিরিয়ে নিয়েছে। নতুন দলে তাঁর ভবিষ্যৎও তাঁর বক্তব্যের ওপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।
 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পরিচয়ে মাঠে ফেরার চেষ্টা আখতারুজ্জামান গত এক বছর ধরেই করে আসছিলেন। তিনি বিএনপিতে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতেও সক্রিয় ছিলেন। এমনকি আসন্ন নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ–২ আসনে বিএনপির প্রার্থী জালাল উদ্দিনের পক্ষে কাজ করার ঘোষণাও দেন। এরই মধ্যে শনিবার তাঁর জামায়াতে যোগদান নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।