ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে অবৈধভাবে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ।
তিনি জানান, “আজ অনুমোদিত মামলাটি আর্থিক খাতে ঋণ আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা।”
দুদকের তদন্তে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ম ও সার্কুলার উপেক্ষা করে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম স্টিলস এবং এস আলম ট্রেডিং কোম্পানির নামে অনুমোদনবিহীন ঋণ নিয়েছিলেন।
এই প্রক্রিয়ায় ৯,২৮৩.৯৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়, যা সুদ ও আসলসহ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১০,৪৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকায়।
মামলায় আসামি করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, একাধিক সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এবং এস আলম গ্রুপের মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
তালিকায় আছেন—
সাবেক চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হাসান, সাবেক এমডি মো. মাহবুব উল আলম, মো. আবদুল হামিদ মিয়া, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান ও মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক ইভিপি মিফতাহ উদ্দিন, সাবেক ডিএমডি মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ কায়সার আলী, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক এক্সিকিউটিভ কমিটি চেয়ারম্যান আবদুল মতিন, সাবেক ডিএমডি আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া, সাইফুল ইসলাম, সিরাজুল করিম, মো. জয়নাল আবেদীনসহ আরও অনেকে।
এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলসের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সামাদ, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক রাশেদুল আলম, ইম্প্রেস কর্পোরেশনের মালিক মো. ইসমাইল, এপারচার ট্রেডিং হাউসের মালিক এস. এম. নেছার উল্লাহ, দুলারী এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ছাদেকুর রহমান, আহসান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. এহসান উদ্দীন, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী এবং আনসার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরীসহ একাধিক ব্যবসায়ীও আসামির তালিকায় আছেন।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেনে-শুনে বিনিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করে ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে কাজ করেছেন। এতে ব্যাংক, সাধারণ আমানতকারী এবং দেশের আর্থিক খাত গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০২২ সালের শেষের দিকে ইসলামী ব্যাংকে অস্বাভাবিক ঋণ বিতরণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এখন দায়ীদের বিরুদ্ধে বৃহৎ এই মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।