অবিরাম যানজটে অচল বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড সড়ক: চরম ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৫৫ অপরাহ্ণ   |   ৪৯ বার পঠিত
অবিরাম যানজটে অচল বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড সড়ক: চরম ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, চট্টগ্রাম:-


 

চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর, পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়ক এখন যেন স্থবিরতার প্রতীক। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান ও কনটেইনারবাহী গাড়ির দীর্ঘ সারিতে এই সড়ক পরিণত হয়েছে যানজটের দুঃস্বপ্নে। কোনোভাবেই কমছে না এই দুর্ভোগ, বরং প্রতিদিনই যেন বাড়ছে যন্ত্রণা ও সময়ের অপচয়।
 

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্দর এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী যানজটের মূল কারণ বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, ধীরগতির প্রবেশ প্রক্রিয়া এবং পর্যাপ্ত প্রবেশ গেটের অভাব। এতে বন্দরে প্রবেশ ও প্রস্থানমুখী পণ্যবাহী যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকে।
 

এক ট্রাফিক কর্মকর্তার ভাষায়, “প্রধান গেইটগুলোতে প্রবেশের সময় সীমিত প্রবেশপথ ও একাধিক চেকিং পয়েন্টের কারণে ভয়াবহ জট তৈরি হয়। এতে পুরো সড়কের গতি থমকে যায়।”
 

অন্যদিকে বন্দর গেইটের সামনে অপেক্ষমাণ চালকদের অভিযোগ, গেইটের সার্ভার সমস্যা, কর্মীদের অনিয়মিত কাজ এবং দীর্ঘ বিরতি যানজটকে আরও তীব্র করছে।
এক কাভার্ড ভ্যানচালক বলেন, “অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আবার দুপুরের খাবার বা বিশ্রামের সময় গেইট বন্ধ থাকে। এতে লাইন কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।”

 

এদিকে সীমেন্স হোস্টেল থেকে ফ্রি-পোর্ট হয়ে কর্ণফুলী ইপিজেড পর্যন্ত ম্যাক্স কোম্পানির ধীরগতির কাজ, ওয়াসা ও গ্যাস লাইনের খোঁড়াখুঁড়ি এবং অপরিকল্পিত কনটেইনার ডিপো স্থাপনের কারণে সড়কের অবস্থা আরও করুণ হয়েছে। বৃষ্টিতে পানি জমে সড়কে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।
 

স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষ প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছেন এই যানজটে। মুমূর্ষু রোগীর অ্যাম্বুলেন্স, স্কুলবাস ও বিমানবন্দরমুখী যাত্রীদেরও পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।
 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দুই দফায় সরেজমিনে গিয়ে অস্থায়ীভাবে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও, কয়েকদিনের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে পথঘাট।
 

এ অবস্থার প্রতিবাদে “বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড সচেতন নাগরিক সমাজ” নামে নতুন একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। সংগঠনটি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে এবং সম্প্রতি এক মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।
 

মানববন্ধনে বন্দর থানা সিটিজেন ফোরাম-এর সভাপতি ও বিএনপি নেতা আলহাজ হানিফ সওদাগর বলেন,
“এই যানজট এখন শুধু বন্দর নয়, পুরো নগরীর সড়ক ব্যবস্থাকেই অচল করে দিচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড), আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তেল সেক্টরও মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।”

 

বক্তারা সল্টগোলা ক্রসিং থেকে ইপিজেড পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে পার্কিং নিষিদ্ধ করা, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের প্রবেশ সময় নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং বন্দর গেইট সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান।
 

তাদের অভিযোগ, অনেক সময় যানজট বিশ্বরোড মোড় থেকে বড়পোল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, যা শুধু নাগরিক জীবনে নয়, পুরো বন্দরের কার্যক্রমেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।