গত তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয়-ব্যয় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করায় সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বলেই মনে করছেন অনেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে ১২ হাজার ২৭০ কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যেই সরকার মূলত রিগ্রেসিভ করব্যবস্থার দিকে ঝুঁকেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৪.৮০ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ শতাংশই পরোক্ষ কর, যেমন ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক থেকে আদায় হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থার মূলনীতির পরিপন্থি। এই চাপ সাধারণ মানুষের ওপর আরও ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যয় অনেক বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে, একসময় আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে ৮৬ টাকা ছিল এবং ভ্যাট ছিল ৭.৫ শতাংশ। এখন ডলারের মূল্য ১২০ টাকা এবং ভ্যাট ১৫ শতাংশ। ফলে চাপ দ্বিগুণ বেড়েছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, অর্থবছরের মাঝখানে কর বৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষ ও ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ আরও বাড়াবে। তার মতে, এমন সিদ্ধান্ত উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নেওয়া মোটেই সমীচীন হয়নি।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে জনসাধারণের ওপর বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। এখন সময়ই বলে দেবে, এই দাবি কতটা সত্য।
কর বৃদ্ধির কারণে ইন্টারনেট সেবা, মোবাইলফোনে কথা বলা, হোটেল-রেস্তোরাঁ সেবা, কোমল পানীয়, ওষুধ, এলপি গ্যাস, ফলের রস, বিস্কুট, সিগারেটসহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ব্যয় বেড়ে গেছে। এর ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমান করনীতির ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি নীতিগতভাবে কতটা সঠিক, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।