বদনজর থেকে রক্ষার উপায়

প্রকাশকালঃ ১১ জুলাই ২০২৪ ০৪:৫০ অপরাহ্ণ ২৯৩ বার পঠিত
বদনজর থেকে রক্ষার উপায়

কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি আশ্চর্য হয়ে উপহাস করে, হিংসা করে কিংবা লোভনীয় ভঙ্গিমায় দৃষ্টি দিলে এতে যদি তার ক্ষতি হয়, তাহলে তাকে অশুভ দৃষ্টি বা বদনজর বলা হয়। বিভিন্ন দেশে সামাজিক প্রথা অনুযায়ী ছোট বাচ্চাদের কপালের পাশে কালো টিপ দেওয়া হয়। এতে তারা অশুভ দৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকতে পারবে বলে মনে করা হয়। ফলের গাছ বা ফসলের ক্ষেতে কারো ‘মুখ লেগে যাওয়ার’ ভয়ে মাটির পাতিলে চুনা লাগিয়ে টানিয়ে রাখার প্রথাও গ্রামগঞ্জে প্রচলিত আছে। ঘরবাড়ি সোনা-রুপার পানি দিয়ে ধৌত করে বদনজর কাটানোর চেষ্টা করা হয়।


যদিও এগুলো বদনজর রোধ করার ইসলামসম্মত পদ্ধতি নয়, তবু বদনজর লাগার বিষয়টিও একেবারেই অবাস্তব বা কুসংস্কার নয়। পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে জানা যায়, কুদৃষ্টি বা বদনজর লেগে যাওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত সত্য। মানুষের চোখ লাগা (কুদৃষ্টি) এবং এর ফলে অন্য মানুষ বা জন্তু-জানোয়ারের ক্ষতি হওয়া সত্য। এটা মূর্খতাসুলভ কুসংস্কার নয়। এক আয়াতে এসেছে : ‘কাফিররা যখন কোরআন শোনে, তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়িয়ে ফেলবে...।’ (সুরা : কলম, আয়াত : ৫১)

 

এ আয়াতে কুদৃষ্টির প্রভাবের বিষয়ে ইঙ্গিত আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)ও বদনজরের প্রভাবকে সত্য বলে উল্লেখ করেছেন। এক হাদিসে এসেছে : ‘অশুভ দৃষ্টির প্রভাব সত্য। যদি কোনো কিছু ভাগ্যের লিখনকে অতিক্রম করত, তাহলে অশুভ দৃষ্টিই তা করতে পারত। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩১; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৩৯)


নবী করিম (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘অশুভ দৃষ্টি মানুষকে কবরে এবং উটকে পাতিলে প্রবেশ করিয়ে ছাড়ে।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৪১৪৪)

 

সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে আবু সহল ইবনে হুনাইফের ঘটনা সুবিখ্যাত। একবার গোসল করার জন্য তিনি পরিধেয় বস্ত্র খোলেন। তাঁর গৌরবর্ণ ও সুঠাম দেহের ওপর আমের ইবনে রবিআর দৃষ্টি পতিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মুখ থেকে বের হয়ে পড়ে—আমি আজ পর্যন্ত এমন সুন্দর ও কান্তিময় দেহ কারো দেখিনি। তত্ক্ষণাৎ মহল ইবনে হুনাইফের দেহে ভীষণ জ্বর এসে যায়। মহানবী (সা.) এ সংবাদ পেয়ে আমের ইবনে রবিআকে আদেশ দেন, সে যেন অজু করে অজুর পানি থেকে কিছু অংশ পাত্রে রাখে। তারপর তা যেন মহল ইবনে হুনাইফের দেহে ঢেলে দেওয়া হয়।

 

আদেশ মোতাবেক কাজ করা হলে মহল ইবনে হুনাইফ রক্ষা পেলেন। তাঁর জ্বর চলে গেল। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। এ ঘটনায় মহানবী (সা.) আমের ইবনে রবিআকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে কেন হত্যা করে? তোমার দৃষ্টিতে যখন তার দেহ সুন্দর প্রতিভাত হয়েছিল, তখন তুমি তার জন্য বরকতের দোয়া করলে না কেন? মনে রেখো, চোখ লেগে যাওয়া সত্য।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ১৭১৪)

 

যদি কেউ বিস্ময়কর কোনো কিছু দেখে, তার উচিত দোয়া করা—‘বারাকাল্লাহু ফিহি’। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা এতে বরকত দান করুন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, ‘মাশাআল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলা উচিত। এতে কুদৃষ্টির প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যায়। উবাদা ইবনে সামেত (সা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আমি সকালের দিকে মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়েছি। দেখলাম তাঁর গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। ওই দিন আমি বিকেলে তাঁর কাছে আবার গিয়েছি। দেখেছি তিনি সুস্থ।

 

(এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে) তিনি বলেন, জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসেছেন। তিনি আমার জন্য এ দোয়া করেছেন—‘বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা।’ দোয়াটির অর্থ হলো, আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি ওই সব বস্তু থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়। আর হিংসুক ও কুদৃষ্টিকারীর কুদৃষ্টি থেকে আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। (মুসনাদে আহমদ ও তাফসিরে মুনির)

 

পরিশেষে ক্ষতিকর ওষুধ কিংবা খাদ্য যেমন মানুষকে অসুস্থ করে, শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতায় যেমন রোগব্যাধির জন্ম নেয়, ঠিক তেমনি কুদৃষ্টিরও বিশেষ প্রভাব আছে। তবে এ ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস রাখতে হবে, দৃষ্টিশক্তির মধ্যে এমন ক্ষমতা মহান আল্লাহই দান করেছেন। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করা, তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।