আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন ত্যাগী ও দীর্ঘদিনের নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে জীবন বাজি রাখা ত্যাগীদের উপেক্ষা করে কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী ও সুবিধাবাদীরা।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, দীর্ঘদিন ধরে যারা মাঠে-ময়দানে ছিলেন না, এমনকি অতীতে এবং বর্তমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তারাই আজ সদ্য ঘোষিত কমিটির নেতৃত্বে। এতে প্রকৃত ত্যাগীরা অবমূল্যায়িত এবং অপমানিত বোধ করছেন।
একাধিক ত্যাগী নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "বিএনপি যখন দুঃসময় পার করছে তখন যারা গা ঢাকা দিয়েছিল তারাই এখন নেতৃত্বে। শুধু তাই নয় ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (জাপা) দলের সমর্থিত লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ০৬ নং জয়মনির হাট ইউপি নির্বাচনে আব্দুল ওয়াদুদ ভোট করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন তাকেও এই বিতর্কিত কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়েছে এবং লিয়াকত আলী লাভলু চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়ন আওয়ামী যুব লীগের সহ সভাপতি সদ্য ঘোষিত কমিটিতে ২৯ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। এ নিয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা আওয়ামী যুব লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক এর সাথে লিয়াকত আলী লাভলুর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এমন অনেক বিতর্ক ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।"
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে এই কমিটিকে ‘নির্বাচনমুখী সুবিধাবাদীদের জোট’ বলেও মন্তব্য করছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব কে নিয়ে প্রতিবাদী ভাষায় লিখতে দেখা যায়, পোস্ট- কোটি টাকার খেলাঃ কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপি'র ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক আহ্বায়ক কমিটি নেতৃবৃন্দের ইতিহাসঃ -- আহ্বায়ক কাজী মোঃ আলাউদ্দিন মন্ডল পেশায় একজন নিকাহ রেজিস্টার (কাজী)। তার বড় ভাই মরহুম রমজান মন্ডল জাতীয় পার্টির ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি ছিলেন ও তার বড় ভাই আলহাজ্ব জালাল মন্ডল ভূরুামারী সদর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামীলীগ সমর্থীত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় এজাহার ভূক্ত আসামী এবং জনবিচ্ছিন্ন নেতা।
মোঃ সহিদুল ইসলাম আকন্দ, সদস্য সচিব:
২০০৭ সালের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি থেকে ২০১১ সালে (৪) সহ-সভাপতি পদ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। তার বড় ভাই জনাব শাজাহান আলী ইসলামী আন্দোলন এর একজন সক্রিয় কর্মী, ২য় ভাই মোঃ বেলাল হোসেন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী এবং সদর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থীত নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান পদে পদপ্রার্থী ছিল কিন্তু তাকে দল নমিনেশন দেয় নি। তার পরিবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভোটে আওয়ামী সমর্থীত। তার ২য় ভাই বেলাল হোসেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের করা ৩টি মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী। উল্লেখ থাকে যে, সে ১৪০ বোতল মাদকসহ ২০১০ সালে হানিফ পরিবহন থেকে তাকে লালমনি থানা পুলিশ আটক করে এবং মামলা নং জিআর ১২৭/২০১০(লাল) এই মাদক মামলায় ১ মাসের অধিক কারাগারে থাকেন।
এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, কিছু বিশেষ প্রভাবশালী নেতারা অর্থের বিনিময়ে এই বিতর্কিত কমিটি গঠন হয়েছে। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ বিবেচনায় নিয়ে কমিটির পুনর্গঠন বা সংশোধনের দাবি উঠেছে।
উল্লেখ্য, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির এ ধরনের বিতর্কিত কমিটি দলীয় ঐক্যে চিড় ধরাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।