ক্রিকেটের ইতিহাস

প্রকাশকালঃ ০৭ মার্চ ২০২৩ ০২:৫৬ অপরাহ্ণ ৫৭৫ বার পঠিত
ক্রিকেটের ইতিহাস

ক্রিকেট হচ্ছে ব্যাট বলের একটি দলীয় খেলা যাতে এগারোজন খেলোয়াড়বিশিষ্ট দুইটি দল অংশ নেয়। এই খেলাটির উদ্ভব হয় ইংল্যান্ডে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোসহ অন্যান্য দেশগুলোতে এই খেলা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার লাভ করে চলছে। বর্তমানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান আয়ারল্যান্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দিনের টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলে থাকে। ২০০৫ সাল থেকে জিম্বাবুয়ে স্বেচ্ছায় টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে ২০১১ সালে আবার খেলায় ফিরে আসে। এছাড়া, আরো বেশ কিছু দেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসি' সদস্য। টেস্টখেলুড়ে দেশগুলি ছাড়াও আইসিসি অনুমোদিত আরো দুটি দেশ অর্থাৎ মোট ১২টি দেশ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। খেলোয়াড় হিসেবে যিনি ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন বা খেলে থাকেন, তিনি ক্রিকেটার নামে পরিচিত।

ক্রিকেট খেলা ঘাসযুক্ত মাঠে (সাধারণত ওভাল বা ডিম্বাকৃতির) খেলা হয়, যার মাঝে ২২ গজের ঘাসবিহীন অংশ থাকে, তাকে পিচ বলে। পিচের দুই প্রান্তে কাঠের তিনটি করে লম্বা লাঠি বা স্ট্যাম্প থাকে। তিনটি স্ট্যাম্পের উপরে বা মাথায় দুইটি ছোট কাঠের টুকরা বা বেইল থাকে। স্ট্যাম্প বেইল সহযোগে এই কাঠের কাঠামোকে উইকেট বলে।

ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী দুটি দলের একটি ব্যাটিং অপরটি ফিল্ডিং করে থাকে। ব্যাটিং দলের পক্ষ থেকে মাঠে থাকে দুইজন ব্যাটসম্যান। তবে কোন কারণে ব্যাটসম্যান দৌড়াতে অসমর্থ হলে ব্যাটিং দলের একজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় মাঠে নামতে পারে। তিনি রানার নামে পরিচিত। ফিল্ডিং দলের এগারজন খেলোয়াড়ই মাঠে উপস্থিত থাকে। ফিল্ডিং দলের একজন খেলোয়াড় (বোলার) একটি হাতের মুঠো আকারের গোলাকার শক্ত চামড়ায় মোড়ানো কাঠের বা কর্কের বল বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের (ব্যাটসম্যান) উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করে। সাধারণত নিক্ষেপকৃত বল মাটিতে একবার পড়ে লাফিয়ে সুইং করে বা সোজাভাবে ব্যাটসম্যানের কাছে যায়। ব্যাটসম্যান একটি কাঠের ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ডেলিভারীকৃত বলের মোকাবেলা করে, যাকে বলে ব্যাটিং করা। যদি ব্যাটসম্যান না আউট হয় দুই ব্যাটসম্যান দুই উইকেটের মাঝে দৌড়িয়ে ব্যাটিং করার জন্য প্রান্ত বদল করে রান করতে পারে। বল নিক্ষেপকারী খেলোয়াড়বাদে অন্য দশজন খেলোয়াড় ফিল্ডার নামে পরিচিত। এদের মধ্যে দস্তানা বা গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে যিনি অবস্থান করেন, তাকে বলা হয় উইকেটরক্ষক। যে দল বেশি রান করতে পারে সে দল জয়ী হয়।

একদিনের ক্রিকেটে জয়লাভ দু'ধরনের হয়:- () রানের ব্যবধানে এবং () উইকেটের ব্যবধানে।

রানের ব্যবধানে জয়লাভের উদাহরণ হচ্ছে

প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ দল ৫০ ওভারে উইকেটের বিনিময়ে ৩১১ রান করে। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া দল ৪৭ ওভারে সবক'টি উইকেট বা ১০ উইকেটের বিনিময়ে ২১০ রান করে। ফলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০১ রানে জয়ী হবে।

উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভের উদাহরণ হচ্ছে -

 

প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া দল ৫০ ওভারে উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দল ৩৭ ওভারে উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান করে। ফলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উইকেটে জয়ী হবে।

কয়েকশবছর ধরে ক্রিকেট একটি দলীয় খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটির আধুনিক রূপের সূত্রপাত হয় ইংল্যান্ডে এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যেই এই খেলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন: বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত আফগানিস্তানে ক্রিকেটই অধিক জনপ্রিয় খেলা। বিভিন্ন অঞ্চল যেমনঃ ইংল্যান্ড ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, বারমুডা এবং ক্যারিবিয়ানের ইংরেজিভাষী দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহে ক্রিকেট একটি প্রধান খেলা। ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো একত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে বিশ্বে ক্রিকেট খেলে থাকে। নেদারল্যান্ডস, কেনিয়া, নেপাল আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন -পেশাদার ক্রিকেট ক্লাব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া একশর বেশি ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশ রয়েছে যারা বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি' সদস্য।

 

ক্রিকেটে বিভিন্ন সময়ে অনেক রাজনৈতিক বিতর্ক উঠেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ব্যাসিল ডিঅলিভিয়েরা কেলেঙ্কারি যার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের বডিলাইন সিরিজ এবং অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের মধ্যে আন্ডারআর্ম বোলিংয়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

ক্রিকেটের আইন

ক্রিকেট খেলায় ৪২টি ক্রিকেট আইন আছে, যা বিভিন্ন প্রধান ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে প্রণয়ন করেছে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব। কোন বিশেষ খেলাতে দলগুলো সর্বসম্মতিক্রমে কোন আইন পরিবর্তন বা লঙ্ঘন করতে পারে। অন্যান্য আইনগুলো প্রধান আইনের সম্পূরক এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে ব্যবহৃত হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারের খেলায় পুরনো আদল থেকে বেরিয়ে ক্রিকেটকে আরো আকর্ষনীয় করতে ফিল্ডিং দলের ওপর কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে।

খেলোয়াড়

একটি দল এগারজন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হয়। খেলার দক্ষতার উপর নির্ভর করে এদেরকে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান অথবা বোলার হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যে-কোন ভারসাম্যপূর্ণ দলে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান এবং চার থেকে পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ বোলার থাকে। প্রতি দলেই একজন বিশেষজ্ঞ উইকেট রক্ষক থাকে। সাম্প্রতিককালে বিশেষজ্ঞ ফিল্ডারের ধারণা চালু হয়েছে এবং সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রতি দলে একজন অধিনায়ক থাকেন যিনি মাঠে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন।

যে খেলোয়াড় বোলিং এবং ব্যাটিং উভয় ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শী তিনি অল-রাউন্ডার হিসেবে পরিচিত। যিনি ব্যাটসম্যান উইকেটরক্ষণের কাজে পারদর্শী তিনি উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত, যা কখনও কখনও বিশেষ ধরনের অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়। সত্যিকারের অল-রাউন্ডার দলের মূল্যবান খেলোয়াড় তবে এদের দেখা কমই মেলে। অধিকাংশ খেলোয়াড়ই হয় ব্যাটিং, না হয় বোলিংয়েই বেশি মনোযোগ দেন।

আম্পায়ার

 প্রতি খেলায় মাঠে দুইজন আম্পায়ার থাকেন যারা খেলা পরিচালনা করেন। একজন আম্পায়ার (ফিল্ড আম্পায়ার) বোলার যে প্রান্ত থেকে বল করেন সেই প্রান্তে উইকেটের পিছনে অবস্থান করেন। মাঠে তিনিই অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অন্য আম্পায়ার (স্কয়ার লেগ আম্পায়ার) মাঠে স্কয়ার লেগ অবস্থানে থাকেন, যাতে তিনি ব্যাটসম্যানকে পাশ থেকে দেখতে পারেন এবং তিনি যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে ফিল্ড আম্পায়ারকে সাহায্য করেন। পেশাদার খেলায় মাঠের বাইরে একজন অতিরিক্ত আম্পায়ার থাকেন যিনি তৃতীয় আম্পায়ার বা থার্ড আম্পায়ার নামে পরিচিত। মাঠের আম্পায়ারেরা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজনবোধে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নিতে পারেন যিনি টেলিভিশনে পুণঃপ্রচার দেখে সিদ্ধান্ত নেন। আন্তর্জাতিক খেলাগুলোতে মাঠের বাইরে একজন ম্যাচ রেফারি থাকেন, যিনি খেলাটি ক্রিকেটের আইনানুযায়ী হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করেন।        

স্কোরার

সাধারণত প্রতিটি দল একজন করে দুইজন স্কোরার নিয়োগ করে থাকে। ক্রিকেটের আইন অনুসারে অফিসিয়াল স্কোরার কত রান হয়েছে, কত উইকেট পড়েছে, এবং কত ওভার খেলা হয়েছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখে। তারা আম্পায়ারের সংকেত দেখে এবং খেলার বিরতিতে আম্পায়ারের সাথে স্কোর মিলিয়ে দেখে তা ঠিক আছে কিনা। বাস্তবে স্কোরাররা আরো অনেক ব্যাপার লিপিবদ্ধ করে, যেমনঃ বোলারের বোলিং পরিসংখ্যান, কোন দল কি হারে বোলিং করেছে এবং দলগুলোর বিভিন্ন গড় পরিসংখ্যান ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক জাতীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় গণমাধ্যমকে বিভিন্ন রেকর্ড পরিসংখ্যান জানতে হয়, তাই ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক সম্প্রচারের জন্য বিভিন্ন সময়ে আনঅফিসিয়াল স্কোরার রাখা হয়। অফিসিয়াল স্কোরাররা মাঝে মাঝে ভুল করে, তবে আম্পায়ারের ভুলের সাথে এটির তফাৎ হলো ঘটনার পর এটিকে সংশোধন করা যায়।

খেলার মাঠ

ক্রিকেট মাঠ একটি বিশাল বিশাল বৃত্তাকার অথবা ডিম্বাকার ঘাসবহুল জমিনের উপর নির্মিত হয়। যদিও মাঠের আকারের বেলায় সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবে এটির ব্যাস সাধারণত ৪৫০ ফুট (১৩৭ মি) থেকে ৫০০ ফুট (১৫০ মি) এর মধ্যে হয়ে থাকে। অধিকাংশ মাঠেই দড়ি দিয়ে মাঠের পরিসীমা ঘেরা দেয়া থাকে যা সীমানা নামে পরিচিত।

পিচ

 

     

ক্রিকেট খেলার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে থাকে মাঠের মাঝে যা সাধারণত ছোট করে ছাটা ঘাস অথবা ঘাসবিহীন চতুর্ভুজাকৃতির অংশ। এটিকে পিচ বলা হয়। পিচের পরিমাপ হচ্ছে ১০ × ৬৬ ফুট (.০৫ × ২০.১২ মি)

পিচের দুইপ্রান্তে তিনটি করে খাড়া কাঠের দন্ড মাটিতে গাঁথা থাকে, যা স্টাম্প নামে পরিচিত। স্টাম্পের উপরে দুটি কাঠের টুকরা থাকে যা বেইল নামে পরিচিত।, তিনটি স্ট্যাম্পের উপর দুটি বেইল স্ট্যাম্পগুলোকে সংযুক্ত করে। ক্রিকেটে স্ট্যাম্পে লেগে আউট হওয়ার ক্ষেত্রে যেকোন একটি বেইল ফেলা বাধ্যতামূলক। তিনটি স্ট্যাম্প দুটি বেইলের সমষ্টিগত সেট নামে উইকেট নামে পরিচিত। পিচের একপ্রান্তের নাম ব্যাটিং প্রান্ত, যে প্রান্তে ব্যাটসম্যান দাঁড়ায় এবং অপর প্রান্তের নাম বোলিং প্রান্ত যেখান থেকে বোলার দৌড়ে এসে বল করে। দুটি উইকেটের সংযোগকারী রেখার মাধ্যমে মাঠটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়; তার মধ্যে যেদিকে ব্যাটসম্যান ব্যাট ধরেন সেদিকটিকে অফ সাইড এবং যে দিকে ব্যাটসম্যানের পা থাকে সেদিকটিকে বলে অন সাইড। অন্যভাবে বলা যায় ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের ডান দিক এবং বাম-হাতি ব্যাটসম্যানের বাম দিক হচ্ছে অফ সাইড এবং অন্যটি অন সাইড বা লেগ সাইড।

পিচে যে রেখা আঁকা থাকে তাকে বলে ক্রিজ। ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বোলার বৈধ বল করেছেন কি না তা যাচাইয়ের জন্যও ক্রিজ ব্যবহৃত হয়।