প্রকাশকালঃ
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:২৮ অপরাহ্ণ ১৮৮ বার পঠিত
২০২৩ সাল। বছরজুড়েই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় ছিল ভোট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের আন্দোলন, ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা, বিদেশি কূটনীতিকদের তত্পরতা, গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে উত্সাহিত করতে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি ঘোষণা ছিল রাজনীতিতে আলোচিত বিষয়। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রধান দুই দলকে সংলাপে বসার পরামর্শ দেন বিদেশিরা। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে শুরুতে সংলাপের ইঙ্গিত দেওয়া হলেও শেষে দুই দলের শর্তের বেড়াজালে ভেস্তে যায় সংলাপ। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও ২০২৩ সালের মতো কঠিন সময় পার করতে হয়নি ক্ষমতাসীন দলকে। বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি নানামুখী সব চাপ সামলে ভোটের মাঠকে উত্সবমুখর করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২৮টি রাজনৈতিক দল।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বছরের শুরু থেকেই রাজপথে সক্রিয় ছিল বিএনপি। দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি নির্বাচন সামনে রেখে প্রথমেই দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে সারা দেশেই বিক্ষোভ, সমাবেশ-মহাসমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগ থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পদযাত্রা, অবস্থান কর্মসূচি, গণমিছিল ও রোডমার্চ কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে ছিল বিএনপি ও তার মিত্ররা। বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় রাজপথে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ করলে আওয়ামী লীগ করত শান্তি সমাবেশ। বিএনপি গণমিছিল দিলে রাজপথে সতর্ক পাহারায় থাকত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের নানান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। তবে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এরপর অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান দলটির নেতারা।
বিদায়ী ২০২৩ সালেও রাজনীতির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতে। তবে বছরটিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দার কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হয়েছে সরকারকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের মাধ্যমেই বিএনপি-জামায়াত জোটকে বছরজুড়ে দমিয়ে রাখতে সক্ষম হন।
সংলাপ প্রত্যাখ্যান : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছিল ততই রাজনৈতিক অঙ্গনে সংলাপের বিষয়টি জোরালো হচ্ছিল। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের পদত্যাগের পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেওয়ার পর সংলাপ হতে পারে। তবে এটি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ। ২৩ মার্চ ইসির সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। অন্যদিকে বছরের শেষ দিকে গত নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
রাজনীতিতে আলোচনায় ভিসা-নীতি : বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২০২৩ সালে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তত্পরতা ছিল আলোচনায়। সংলাপের মাধ্যমে সব দলকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দেন তিনি। ২৪ মে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে উত্সাহিত করতে ভিসা-নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে তত্পর ছিল অন্যান্য বিদেশি দেশও। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদল দফায় দফায় দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। নির্বাচন সামনে রেখে বিদায়ি বছরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের রাজনীতিবিদ ও কূটনৈতিকরা ঢাকা সফর করেছেন।
বক্তব্যে সোচ্চার জাপা :কয়েক বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্যে সোচ্চার ছিল সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। নিয়মিতই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের কঠোর সমালোচনা করতেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এক পর্যায়ে ২৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় নিয়ে নির্বাচনে মাঠে নামে জাপা। ভোটে ২৮৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে দলটি।
বহিষ্কার মিশন :দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরসহ ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হওয়ায় শাহজাহান ওমরকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
হরতাল-অবরোধ :গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পরদিন থেকে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলটি ও তার মিত্ররা। ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ এবং ৪ দফায় পাঁচ দিন হরতাল পালন করে বিএনপি। দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে নির্বাচনের ঠিক ১৭ দিন আগে ২০ ডিসেম্বর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বিএনপি।
দলের অন্তঃকোন্দল মেটানো : টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে নানান সময়ে বিভিন্ন দল থেকে অনেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। তাদের কেউ কেউ আবার দলীয় পদ-পদবিও বাগিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করেও অনেকে যথাযথ মূল্যায়ন পাননি। এসব কারণসহ নানান কারণে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল বেড়েছে। বিশেষ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল ব্যাপক হারে বেড়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০ আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ৩ হাজার ৩৬২ জন। এসব প্রার্থীকে গণভবনে ডেকে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এবার কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আপত্তি নেই জানিয়ে দেওয়া হয়।