বন্যায় তিন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮ হাজার ৪০০ পরিবার

প্রকাশকালঃ ১৭ জুলাই ২০২৩ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ ২২৮ বার পঠিত
বন্যায় তিন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮ হাজার ৪০০ পরিবার

জানের ঢল ও বৃষ্টিতে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দির কুতুবপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে মানুষ। গতকাল ঘুঘুমারি থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত কমছে। গতকাল রবিবার বিকেলে সব নদীর পানিই ছিল বিপৎসীমার নিচে। এতে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। পানি নামার সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

গতকাল পর্যন্ত সাময়িক এই বন্যায় তিন জেলার ৩৮ হাজার ৪০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে জেলা প্রশাসন সূত্রে। পানি ঢুকেছে ৪৪টি স্কুলের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুড়িগ্রামের এক হাজার ৪০০ হেক্টর বীজতলা ও ফসলের ক্ষেত।


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি কমছে, যা আজ সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এ সময় কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হতে পারে। গতকাল উত্তরের সব নদ-নদীর পানিই বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে। সকাল ৯টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপত্সীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপরে থাকলেও বিকেল ৩টায় ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপত্সীমার চার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের সব নদীর পানিই এখন বিপত্সীমার নিচে।


সামনে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও নেই। ভারতের উজানেও বৃষ্টি অনেকটাই কমেছে। ফলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায়ও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছি না আমরা এখন।’কুড়িগ্রামে ১৮,০০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত

কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নদীতীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের নিচু এলাকার অনেক ঘরবাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি। তবে এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। তৈরি হয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যসংকটও।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রামের ১৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমির বীজতলা, সবজি, কলা ও পাট ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৫২টি পরিবার। ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এগুলোর কোনোটিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে, কোনোটিতে সীমিত করা হয়েছে।


গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন চরে আবাদি জমির ওপর দুই থেকে তিন ফুট বালু পড়ে অনাবাদি হয়ে গেছে। সারডোব গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, তাঁর তিন একর জমিতে বালু পড়েছে। পাটের বোঝা ভেসে গেছে ৩৫০টি।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, এখন পর্যন্ত ৩৬৩ মেট্রিক টন চাল ও আট লাখ ৫০ হাজার টাকা উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত দুই হাজার ২০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। লালমনিরহাটে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ হাজার ৪০০ পরিবার

গতকাল লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলার ১৫ হাজার ৪০০ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের জন্য এখন পর্যন্ত ১১০ মেট্রিক টন চাল ও শুকনা খাবার বিতরণের জন্য চার লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষি, মত্স্য ও অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আদিতমারী উপজেলার নদীতীরবর্তী একাধিক এলাকায় কয়েকটি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। মহিষখোচা ইউনিয়নের একটি বালুর বাঁধের কিছু অংশ ধসে গেছে। কালীগঞ্জে সদ্যোনির্মিত দুটি ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক ও একটি রাস্তা তিস্তার পানিতে ভেঙে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি মসজিদের একাংশ। এদিকে নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকায় নদীর পানির সঙ্গে আসা বালুতে ঢেকে গেছে একরের পর একর রোপণের অপেক্ষায় থাকা জমি। এরই মধ্যে রোপণ করা হয়েছে এমন ক্ষেতও তলিয়ে আছে পানিতে। ডিমলায় ৫,০০০ পরিবার ও ৫টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত

সরকারি হিসাব মতে, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় গতকাল পর্যন্ত ছয় ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মোট পাঁচ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ৪ উপজেলার চরাঞ্চল প্লাবিত

সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপত্সীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে যমুনা নদীর পানি। গতকাল বিকেলে শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপত্সীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল যমুনার পানি। পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি। তিল, পাট, আখ, শাক-সবজি পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বগুড়ায় যমুনাতীরের ২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি


বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নে যমুনার পানি বেড়ে বিপত্সীমা ছুঁই ছুঁই করছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরের নিচু এলাকায় পানি ঢুকছে। ধুনট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলার রহমান বলেন, ‘যমুনা নদীর কূলে অবস্থিত কৈয়াগাড়ি ও শিমুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে। আশপাশের উঁচু বাঁধ কিংবা বাড়িতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

সারিয়াকান্দিতেও বিপত্সীমা ছুঁই ছুঁই করছে যমুনার পানি। রবিবার বিকেল ৩টায় সেখানে পানি বিপত্সীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়ায় উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের ধারাবর্ষা গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘অতিদ্রুত ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ গোয়ালন্দে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানি ও স্রোত বেড়েছে । গোয়ালন্দ উপজেলা পাউবো অফিসের গেজ রিডার (পানি পরিমাপক) সালমা খাতুন জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। স্থানীয় দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম জানান, কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে নদীতীরবর্তী দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া, উজানচর ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে চারটি ঘাট সচল রয়েছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে স্রোতের তীব্রতা বেড়েছে। এতে ফেরি পারাপারে স্বাভাবিকের চেয়ে সময় অনেকটা বেশি লাগছে।