নিত্যপণ্যের বাজারে কমছেই না অত্যাবশ্যক তিন খাদ্যপণ্য তেল, চিনি ও আলুর দাম

প্রকাশকালঃ ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ১২:২৪ অপরাহ্ণ ৬৪৯ বার পঠিত
নিত্যপণ্যের বাজারে কমছেই না অত্যাবশ্যক তিন খাদ্যপণ্য তেল, চিনি ও আলুর দাম

নিত্যপণ্যের বাজারে অত্যাবশ্যক তিন খাদ্যপণ্য তেল, চিনি ও আলুর দাম কিছুতেই কমছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যে চড়া দাম ছিল, ওই সরকারের পতনের প্রায় দুই মাস পরও পণ্য তিনটি আগের সেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতির বাজারে এসব পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তারা। তারা বলছে, বাজারে সরকারের কড়া নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

 

ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা আগের মতো করেই অতিমুনাফা করছেন। গত ২১ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। ওই দিন বৈঠক উপস্থিত ছিলেন মেঘনা, সিটি, এস আলম, দেশবন্ধু, এডিবল অয়েল, টি কে গ্রুপসহ বেশ কিছু বেসরকারি কম্পানির প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

 
বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. বিন ইয়ামিন মোল্লা সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে (আলটিমেটাম) বলেছিলেন, সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১২০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা ও আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা করতে হবে। বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়।


একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ও বিক্রয় করা বেসরকারি যত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদেরও একই আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পরও দাম কমেনি। বাজারে এখন সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা লিটার, চিনি ১৩০ টাকা কেজি এবং আলু ৬৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. বিন ইয়ামিন মোল্লাবলেন, ‘দ্রব্যমূল্য কমানোর আলটিমেটামের সঙ্গে আমাদের দাবি ছিল, যারা গত স্বৈরাচার সরকারের দোসর, তাদের পদত্যাগ করতে হবে। এরপর প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী তাঁর পদে নেই।


পরে আমাদের সঙ্গে আরো বৈঠক করার কথা ছিল, কিন্তু ওই পদে কেউ না থাকার কারণে কমিশনের অন্য সদস্যরা এ ব্যাপারে সমন্বয় করতে পারছেন না। যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই পণ্যগুলোর সঙ্গে জড়িত, তারা দাম না কমালে তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমরা প্রতিবাদ করব। প্রতিযোগিতা কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করব।

 

যদি আমাদের সঙ্গে তারা বৈঠক করতে আরো দেরি করে, তাহলে আমরা নিজেরা আলোচনা করে কর্মসূচি দেব।’ তিনি বলেন, ‘নতুন সরকার আসার প্রায় দুই মাস হলো, কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের প্রধান যে দরকার ছিল, দ্রব্যমূল্য কমানো, এই জায়গায় কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনই আসেনি। তাহলে মানুষ যে এত জীবন দিল, রক্ত দিল, তাদের প্রত্যাশা পূরণ হলো কিভাবে? কোনো ফল আসছে না।’

 

ভোক্তাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দুই সপ্তাহ নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিজেদের রং পরিবর্তন করে আগের মতোই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে সিন্ডিকেট চলমান। ব্যবসায়ীরা এখন নতুন রূপে আসছেন। ৫ আগস্টের পর দুই সপ্তাহের মতো পণ্যের দাম কিছুটা কম ছিল। এরপর ব্যবসায়ীরা বুঝে গেলেন, বর্তমান সরকারও ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তেমন কিছু করবে না। এ কারণে তাঁরা তাঁদের কার্যক্রম আগের মতোই রেখেছেন।

 

আমদানিকারকরা চিনির দাম সম্পর্কে বলছেন, প্রতি কেজি চিনিতে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সরকারকে দিতে হয় ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এতে আমদানি করা চিনির দাম বেড়ে যায়। অন্যদিকে ভারত থেকে চোরাই পথে চিনি আসার কারণে তাঁরা চাপে পড়ছেন। ফলে কমছে না চিনির দাম।