মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় আন্তঃউপজেলা অধিকার পরিষদ ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারাও। কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন আন্তঃউপজেলা অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক আফিন্দি এবং সঞ্চালনা করেন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদ। এ সময় বক্তব্য রাখেন— বাপা জেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক আইনজীবী সমিতির সভাপতি তৈয়বুর রহমান বাবুল, পরিবেশ সংগঠন হাউসের নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী শুভ, জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশ উন্নয়ন ফোরাম, সিলেটের সভাপতি আবুল হোসেন, হাওর-নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি মিজানুর রহমান রাসেল প্রমুখ।
এছাড়া জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইমনুদ্দোজা আহমদ, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইজাজুল হক চৌধুরী নাছিমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা জানান, সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় ফসলি হাওর ‘দেখার হাওর’ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এখানে প্রায় ৪৫ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমির মধ্যে ২৪ হাজার ২১৪ হেক্টরে চাষাবাদ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস মৌজায় ১২৫ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু এই স্থানে হাওরের পানিপ্রবাহ দুই পাশের দুটি ব্রিজ হয়ে কালনী নদীতে গিয়ে মিশে। যদি এখানে বিশাল ক্যাম্পাস গড়ে ওঠে, তবে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে ফসলি জমি, জলাশয় ও হাওরের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, আহসান মারা ও জয়কলস ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়া খালের পানিপ্রবাহ ব্যাহত হলে হাওরের জমি, জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি জেলা সদর ও আশপাশের জনবসতিও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অনুমোদন হয়। পরে ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে রসায়ন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১২৮ জন এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ১৪৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন ১৭ জন শিক্ষক ও ২৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
প্রথম থেকেই শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ভবন, একটি মাদ্রাসা, একটি কলেজ ও কয়েকটি ভাড়া ঘরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জিএম শহিদুল আলম জেলা প্রশাসকের কাছে জমি অধিগ্রহণের আবেদন করেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১২৫ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়। তবে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ এবং স্থানীয় ও পরিবেশবাদী সংগঠনের আন্দোলনের মুখে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রয়েছে।