আজ বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’। প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মুসল্লি কমিটি। বিচারক ছিলেন দেশসেরা হাফেজ, কারি ও আলেমরা। প্রতিযোগিতার বিচারক প্যানেলের সদস্য কারি আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারির সঙ্গে কথা বলেন আতাউর রহমান খসরু।
আল-হামদুলিল্লাহ, আমি প্রথম থেকে কুরআনের নূরের সঙ্গে ছিলাম। এত স্বল্প সময়ে দেশব্যাপী এমন একটি আয়োজন করা সহজ ছিল না। বিশেষত কুরআনের নূর আয়োজনটি এবারই প্রথম। তার পরও বলতে হবে, সাফল্যের সঙ্গেই তা শেষ করা গেছে।
এই কৃতিত্বের বড় অংশীদার বসুন্ধরা গ্রুপ। তারা যে আন্তরিকতা দেখিয়েছে, তা অভিভূত হওয়ার মতোই। আমি মনে করি, বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘কুরআনের নূর’ যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা দেশে ও দেশের বাইরে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। একদিন আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় রূপ নেবে।
বসুন্ধরা গ্রুপ এবং এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রুপের প্রতিনিধিদের কারো কাছ থেকে আমরা কখনো ‘না’ শব্দটি শুনিনি।
বাংলাদেশে এর আগেও একাধিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে এমনও প্রতিযোগিতা রয়েছে। তবে কুরআনের নূর নানা দিক থেকেই ব্যতিক্রম।
যেমন আমরা পুরো বাংলাদেশকে ১১টি জোনে ভাগ করেছি এবং প্রতিটি জোনেই আমরা অডিশন নিয়েছি। যা অনেক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেই হয় না। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে দেশের সব অঞ্চলের প্রতিভাবান হাফেজদের কাছে পৌঁছা সহজ হয়েছে। প্রতিটি জোনের অডিশন নেওয়ার সময় আমরা খুদে হাফেজদের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। যদি গত দুই দশক আগের হাফেজদের সঙ্গে এ সময়ের হাফেজদের তুলনা করা হয়, তবে হিফজুল কোরআনে বাংলাদেশের অগ্রগতি সহজেই বোঝা যাবে।
আমাদের দেশের হাফেজরা অনেক বেশি পরিশ্রমী। হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা দিনে ১৮ ঘণ্টা কোরআন চর্চা করে। যা পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চলে দেখা যায় না। এ প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী হাফেজদের সঠিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে তারা পৃথিবীতে ইতিহাস রচনা করবে। ইনশাআল্লাহ!
প্রশ্ন হতে পারে, হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতাগুলো আমরা কেন করি? আমি বলব, এর প্রভাব সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষের ওপর পড়ছে। একজন অভিভাবক যখন টেলিভিশনের পর্দায় একজন শিশুকে সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত করতে দেখেন, তখন তার মনেও সন্তানকে হাফেজ বানানোর সুপ্ত বাসনা তৈরি হয়। এভাবে মানুষের ঘরে ঘরে কোরআনের চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপ কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। আমরা আশা করি, তা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশের মাটিতে অনেক সাফল্য দেখাচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা হয় না। আন্তর্জাতিক আয়োজনগুলো সাধারণ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই হয়ে থাকে। ২০২১ সালে ওআইসির সহযোগিতায় বাংলাদেশেও সরকারি উদ্যোগে অনলাইন কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। সরকারি উদ্যোগে না হলে, বেসরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা হতে পারে। মিসর ও সৌদি আরবে এর দৃষ্টান্ত আছে। বাংলাদেশে বসুন্ধরা গ্রুপের মতো বৃহৎ শিল্পপরিবারগুলো এই উদ্যোগ নিতে পারে।