নাগরিক সাংবাদিকতা ও সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজম

প্রকাশকালঃ ২৬ মে ২০২৪ ১২:৫৯ অপরাহ্ণ ৯৭৬ বার পঠিত
নাগরিক সাংবাদিকতা ও সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজম

ঢাকা প্রেসঃ
সম্পাদকিয় পতিবেদন


প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে সংবাদ মাধ্যমও দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। নাগরিক সাংবাদিকতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজমের উত্থান এই বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই বিষয় নিয়ে আমাদের কিছু একাডেমিক  স্টাডি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।  নাগরিক সাংবাদিকতা ও সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজমের প্রভাবে  সাধারণ মানুষ  পেশাদার সাংবাদিকদের পরিবর্তে নিজেদের সচেতনতা বোধ থেকে  সংবাদ , প্রতিবেদন ইত্যাদি  মানুষের কাছে পৌছে দিতে চাচ্ছে। পেশাদার  সংবাদ পত্রের কার্য্যক্রমও সাধারণ মানুষের  সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অধিকতর প্রচার প্রসার ঘটছে । আবার সংবাদ মধ্যমগুলো  সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইউটিউব  ইত্যাদি ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ এবং প্রচার করছে। প্রযুক্তির এই সময়ে একজন পেশাদার সংবাদ কর্মী ছাড়াও  এবং একজন সাধারন যে কেউ নাগরিক সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছে । এমতবস্থায়  তথ্য সংগ্রহের ভিন্নতা, গুজব এবং সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই,সংবাদ কর্মীর ভূমিকা ও দায়িত্ব, গণতান্ত্রিকায়নের প্রসার, বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি,দ্রুত তথ্য প্রবাহ, জার্নালিজমের চ্যালেঞ্্‌তথ্য যাচাইয়ের অসুবিধা,পেশাদারিত্বের অভাব, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার সমস্যা, ফেক আইডি, হয়রানি এই বিষয়গুলো নিয়ে কিছু একাডেমিক স্টাডি প্রয়োজন।
 

নাগরিক সাংবাদিকতা ও সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজম:

সাধারণ মানুষের সচেতনতা বোধ থেকে সংবাদ সংগ্রহ, প্রতিবেদন তৈরি এবং প্রচার করাকেই নাগরিক সাংবাদিকতা হিসেবে বলা যায়  পেশাদার সাংবাদিকদের পরিবর্তে সাধারণ মানুষই এই সংবাদ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রক। অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করা এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে এই প্রবণতা আরো বেশি  প্রসারিত হচ্ছে , যেখানে সাধারণ মানুষ এবং পেশাদার সাংবাদিক উভয়ই একই প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে।
 

তথ্য সংগ্রহের ভিন্নতা:

ঐতিহ্যবাহী সংবাদ মাধ্যমগুলো সাধারণত পেশাদার সাংবাদিকদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। সাংবাদিকরা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে। কিন্তু নাগরিক সাংবাদিকতা ও সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজমে সাধারণ মানুষ প্রায়শই স্মার্টফোন, ক্যামেরা এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করে। এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং আরও সহজলভ্য করে তুলেছে, তবে তথ্যের সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য এটি অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
 

গুজব এবং সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই:

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর পরিমাণে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে অনেকই ভুয়া বা অসত্য। নাগরিক সাংবাদিকদের পক্ষে সব সময় সঠিক তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয় না, যার ফলে গুজব এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। পেশাদার সংবাদ কর্মীদের ভূমিকা হলো সঠিক তথ্য যাচাই করা এবং ভুয়া খবর থেকে জনগণকে সতর্ক করা। তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা এবং নির্ভুলতা নিশ্চিত করা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
 

সংবাদ কর্মীর ভূমিকা ও দায়িত্ব:

প্রযুক্তির এই নতুন যুগে সংবাদ কর্মীদের নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে যেমন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, ডেটা বিশ্লেষণ এবং তথ্য যাচাই। তাদের নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের প্রতি অটুট থাকতে হবে এবং সঠিক ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য সংবাদ কর্মীদের বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং টুলস ব্যবহার করতে হবে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
 

গণতান্ত্রিকায়নের প্রসার:

নাগরিক সাংবাদিকতা ও সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজম গণতান্ত্রিকায়নের প্রসার ঘটিয়েছে। এটি জনগণকে আরও বেশি তথ্যের সাথে সংযুক্ত করে এবং তাদের নাগরিক বচন প্রকাশের  অধিকতর সুযোগ করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে এবং বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে পারছে।
 

বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি:

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দেয়, যা ঐতিহ্যবাহী সংবাদ মাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায় না। এই মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক মতামত প্রকাশিত হয়, যা সংবাদ মাধ্যমকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
 

দ্রুত তথ্য প্রবাহ:

সোশ্যাল মিডিয়া দ্রুত তথ্য প্রবাহের মাধ্যম তৈরি করে, যা বিশেষ করে জরুরী পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ঘটনাগুলোকে দ্রুত প্রচারের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও, তথ্যের দ্রুত প্রবাহ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে এবং সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।
 

নাগরিক সাংবাদিকতা ও সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজমের চ্যালেঞ্জ:

তথ্য যাচাইয়ের অসুবিধা:

সোশ্যাল মিডিয়া এবং নাগরিক সাংবাদিকতায় প্রচুর পরিমাণে তথ্য প্রচারিত হয়, যার মধ্যে অনেকই সত্য নয়। ফেক নিউজ এবং গুজব ছড়ানোর প্রবণতা এই মাধ্যমগুলোর অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। সঠিক তথ্য যাচাই করতে না পারলে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে পারে এবং সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
 

পেশাদারিত্বের অভাব:

অনেক নাগরিক সাংবাদিক পেশাদার সাংবাদিকতার নীতিমালা ও নৈতিকতা অনুসরণ না করে সংবাদ পরিবেশন করেন। এর ফলে তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা এবং প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
 

গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার সমস্যা:

নাগরিক সাংবাদিকতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়। এছাড়াও, তথ্যের নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত ডেটার সংরক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ফেক আইডি এবং হয়রানির ঘটনাও ক্রমবর্ধমান।
 

প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে নাগরিক সাংবাদিকতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজমের গুরুত্ব এবং প্রভাব বাড়ছে। এই মাধ্যমগুলো গণতন্ত্রের প্রসার, তথ্য প্রবাহের দ্রুততা এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সংযোজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, সঠিক তথ্য যাচাই, পেশাদারিত্ব বজায় রাখা এবং গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার সমস্যা সমাধানে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে। নাগরিক সাংবাদিকতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া জার্নালিজমকে আরও কার্যকরী এবং বিশ্বাসযোগ্য করতে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা অপরিহার্য। একাডেমিক স্টাডির মাধ্যমে এই বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করা যেতে পারে।

                                                                                                                                                      ...............আমান উল্লাহ সরকার ।