৬ মাসে পুরোনো গাড়ি আমদানি তিন-চতুর্থাংশ কমেছে ডলার–সংকটে

প্রকাশকালঃ ০৬ জুন ২০২৩ ০৭:০৭ অপরাহ্ণ ১৫৪ বার পঠিত
৬ মাসে পুরোনো গাড়ি আমদানি তিন-চতুর্থাংশ কমেছে ডলার–সংকটে

লার-সংকটের কারণে আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে। ফলে গত ছয় মাসে দেশে মাত্র ২ হাজার ৮০০টি রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা অনেক কম বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)।

পুরোনো গাড়ি আমদানিকারকদের এই সমিতি বলেছে, স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশে প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজারের মতো গাড়ি আমদানি হয়। ফলে গত ৬ মাসে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার গাড়ি আমদানি হওয়ার কথা থাকলেও এসেছে তার চার ভাগের একভাগ। তবে ডলার-সংকটের মধ্যে অনেক ব্যাংকমালিক নতুন গাড়ি আমদানির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে বারভিডা।

আজ মঙ্গলবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজেটে বারভিডার দাবিগুলো অনেকাংশে প্রতিফলিত হয়নি। সরকারের নীতি গ্রহণের সময় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে সবার জন্য সুবিধা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরির গাড়িতে শুল্ক-কর পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা।


বারভিডার সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘ডলার-সংকটের কারণে ব্যবসা কিছুটা কমলেও আমরা সহ্য করে নিচ্ছি। কারণ সরকার আমাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে দেশের এই সংকটে আমদানি একেবারে বন্ধ না করলেও লাগাম টানতে হবে। তবে রিকন্ডিশন গাড়ি কম এলেও নতুন গাড়ির ব্যবসায়ীরা আমদানি করছেন। বিশেষ করে ব্যাংকমালিকেরা, যাঁরা গাড়ির ব্যবসা করেন, তাঁরা ডলার পাচ্ছেন এবং ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন।’

রিকন্ডিশন গাড়ির আমদানি কমে যাওয়ার তথ্য দিয়ে হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘ব্যবসাটা কোথায় এসেছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু আমি না, আমাদের এ খাতের সবাই ভুগছে। তবে আমরা আশা করছি, দ্রুত এ সংকট কেটে যাবে। নিয়মিত সরকারের সঙ্গে কথা হচ্ছে, ওনারাও আমাদের সাহস দিচ্ছেন। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’

বারভিডা সভাপতি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের সঙ্গে প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় তাঁরা বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য বিভিন্ন ধরনের গাড়ির শুল্ক-কর পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ তুলে ধরেছিলেন। হাইব্রিড প্রযুক্তির মোটরগাড়িতে সিসিভিত্তিক শুল্ক-করের হার বিদ্যমান। তবে উৎপাদক ও ব্যবহারকারী অন্য দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে সিসি স্ল্যাবের সংস্কার ও পরিবর্তন দরকার।


বারভিডা সভাপতি আরও বলেন, ‘আমরা বাজেট প্রস্তাবে তাই জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কহার পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব করেছিলাম, যাতে এসব গাড়ি আমদানি সহজলভ্য হয় এবং দেশের ভোক্তাশ্রেণি উপকৃত হয়। পাশাপাশি এতে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেত।’

কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে হাইব্রিড গাড়ি (১৮০১ সিসি থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত) আমদানিতে শুল্ক হ্রাস না করায় তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে উল্লেখ করেন হাবিব উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’

হাবিব উল্লাহ আরও বলেন, ‘এ ছাড়া ফসিল ফুয়েলচালিত গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কহার পুনর্বিন্যাস এবং জ্বালানির প্রাপ্যতা ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের সময়ে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি ও ব্যবহার বৃদ্ধি বড় রকমের স্বস্তি দিতে পারে। আমরা তাই বৈদ্যুতিক গাড়ির বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছিলাম। সেটা আবার বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’


দেশে বিদ্যুৎ-সংকটের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাপক আমদানি কতটা যৌক্তিক হবে, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘বিদ্যুতের এ সংকট সাময়িক। তাই এ সমস্যার জন্য বড় সম্ভাবনার খাত আটকে রাখা যায় না। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ গাড়ি বিদ্যুৎ-চালিত হওয়ার একটা পরিকল্পনা আছে। এ জন্য ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে ম্যাপিং করে চার্জিং স্টেশন বসানোর ব্যাপারেও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।’

মাইক্রোবাসকে গণপরিবহন হিসেবে উল্লেখ করে এর ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানায় বারভিডা। এ ছাড়া দ্বিতীয় গাড়ির ক্ষেত্রে পরিবেশ সারচার্জ নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের পরিকল্পনা আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে তারা। বারভিডা বলেছে, কারও দ্বিতীয় গাড়ি যদি কার্বন তৈরিতে সহায়তা না করে, তারপরও তাকে এই কর দিতে হবে কি না, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে বারভিডার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আবদুল হকসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।